বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালের সামনের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন পরিচালক। শেবামেক হাসপাতাল চত্বর থেকে উৎখাত করা হয়েছে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর অবৈধ এ সিন্ডিকেট উৎখাত করে হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। একইসাথে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের জন্য রোগীদের প্রতি আহবান জানিয়ে জরুরি বিভাগে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার তালিকা এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পেতে চালু করা হয়েছে হট লাইন নাম্বার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে খুশি রোগী এবং তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, রোগী বা তাদের স্বজনরা এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে পারবেন। বন্ধ হবে হয়রানি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর জানিয়েছেন, রোগীদের ভোগান্তি বা জিম্মি করে কোনো সিন্ডিকেট চলবে না। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে অনেকদিন থেকেই নানাধরনের অভিযোগ আসছে। এ কারণে হাসপাতাল চত্বর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বের করে দিয়ে স্ট্যান্ডের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক বা মালিক এ নির্দেশনা উপেক্ষা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিচালক আরও জানিয়েছেন, বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। রোগী নিয়ে আসলে তাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগী ধরতে পারবে না বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এর বিপরীতে সরকারি সাতটি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা হয়েছে জরুরি বিভাগের সামনে। পাশাপাশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে।
সূত্রমতে, সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বরিশাল সিটির মধ্যে যেখানেই যাবে মাত্র তিনশ’ টাকা ভাড়া দিতে হবে। এছাড়া সিটির বাহিরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে রোগীর স্বজনদের। রোগী ও তাদের স্বজনদের হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পেতে (০১৭৮২-৭৫৫৫০০) নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেবামেক হাসপাতালে বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে প্রায় একশ’ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। যারমধ্যে ২০টির মতো মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে অবৈধভাবে রোগী পরিবহণ করা হচ্ছে। বৈধ এবং অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের সমন্বয়ে হাসপাতাল চত্বরেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ সিন্ডিকেট।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে গেলে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন থেকে চার হাজার টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের বাঁধায় ঢাকা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই পারতোনা। রোগী বা তাদের স্বজনদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করতে হলেও সিন্ডিকেটকে দিতে হতো তিন হাজার টাকা কমিশন। না দিলে শেবামেকের সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সর্বনিন্ম ১২ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে হেনস্তার শিকার হতে হয় রোগীর স্বজনদের।