নওগাঁর মান্দা উপজেলার সতিহাট ঋষিপল্লি এখন মাদকের অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হয়েছে। গাঁজা, ফেনসিডিল, চোলাই মদ ও নেশার ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য এখানে খোলামেলাভাবেই বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পল্লিটিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদকের কারবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই এই পল্লিতে তৈরি হচ্ছে শত শত লিটার চোলাই মদ। একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। অভিযোগ রয়েছে, এই পল্লির মাদক কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করা হচ্ছে।
মাদক কারবারে জড়িতদের মধ্যে রয়েছে গোকুল ঋষি, জিতেন ঋষি ও আদুরী ঋষি, যারা বর্তমানে গাঁজার ব্যবসায় যুক্ত। চোলাই মদ উৎপাদন ও বিক্রিতে জড়িত রয়েছেন উজ্জল, অমল, গোউর, রতন, খগেন, অঞ্জলি, আদুরী ও দিলু ঋষি। এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।
এদিকে গত ১৮ আগস্ট ঋষিপল্লির পাশ্ববর্তী উত্তর শ্রীরামপুর গ্রাম থেকে ১৯৩ কেজি গাঁজা ও ২১ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে র্যাব। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আলম ইসলামকে। এই ঘটনার পর থেকেই সতিহাট ঋষিপল্লি ও আশপাশের এলাকায় মাদকের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাদক সম্রাট আলম ইসলাম ও সতিহাট ঋষিপল্লির সম্রাজ্ঞী আদুরী ঋষির ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ২০১৪ সালের দিকে। পরে তারা বিয়েও করেন। এরপর থেকেই তারা মাদক কারবারে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট গাঁজাসহ আলম ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মান্দা ও মহাদেবপুর থানায় ৮টি মাদকের মামলা চলছে। কথিত স্ত্রী আদুরী ঋষির বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মাত্র ৩ শতক জমিতে বসতভিটা থাকলেও মাদকের টাকায় আলম ইসলাম এখন সেখানে ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি করেছেন। তার চলাফেরা দেখে অবাক হন সাধারণ মানুষ।’
জানা যায়, ২০১৪ সালে মান্দা থানার তৎকালীন ওসি মোজাফফর হোসেন ‘সতিহাট ঋষিপাড়া মাদক নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছিলেন। ৩০ জন যুবককে নিয়ে তৈরি হওয়া এ সংগঠন তখন পল্লিকে মাদকমুক্ত করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়মিত সভা, সচেতনতামূলক প্রচারণা ও সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অনেকেই মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন।
তবে এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। কমিটির সভাপতি মিলন ঋষি বলেন, ‘বর্তমানে সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। প্রশাসনের সহায়তা না থাকায় সক্রিয়তা হারিয়েছে সদস্যরা। সেই সুযোগে মাদক উৎপাদন ও বিক্রি আবারও পুরোদমে চলছে।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’