একাত্তরের ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা চলছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২১ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১৩ পিএম
একাত্তরের ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা চলছে: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন ভুলিয়ে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতার চেতনা অক্ষুণ্ণ রাখতে সব নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, “১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের কথা বারবার স্মরণ করতে চাই। কারণ, ওই যুদ্ধ আমাকে একটি স্বাধীন দেশ, ভূখণ্ড এবং স্বাধীন সত্তা দিয়েছে। এই দুইটি সত্য—একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই-আগস্টের শহীদরা—আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু আজকে প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা চলছে এই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার।”

তিনি আরও বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনিই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। তাই ইতিহাস বিকৃতির যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি উগ্রবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না, কারণ এতে বাংলাদেশের আত্মা ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”

অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে তিনি অনলাইনে সংযুক্ত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা উলুধ্বনি ও ঢাকঢোল বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানান।

বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ওপর শাসন কায়েম করে তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। সম্প্রতি ব্যাংককে গিয়ে জেনেছি, সেখানকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়েছে। এসব বাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিতাড়িত নেতারা। তারা যে গাড়ি কিনছেন, সেগুলোর দাম দুই-তিন কোটি টাকার কম নয়। এই অর্থ এসেছে বাংলাদেশের জনগণের ঘামঝরা টাকায়।”

তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় ৪৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। “আমাদের অর্থনীতিকে তারা এতটাই দুর্বল করেছে যে, এখন প্রশ্ন ওঠে—জনগণের আস্থায় বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, দেশ চালাবে কোন সম্পদ দিয়ে?”—বলেন ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব জানান, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়াই দলের লক্ষ্য। তিনি বলেন, “তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এমন এক ‘রেইনবো রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে।”

অনুষ্ঠানে গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন কোনও ষড়যন্ত্রেই বানচাল হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “জুলাই সনদের নামে নানা চক্রান্ত চলছে। তবে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নতুন সনদ হবে। তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফাই হবে আগামীর জাতীয় সনদ।”

তিনি আরও দাবি করেন, দেশের নানা স্থানে সংঘটিত সহিংস ঘটনার বিচার হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব ঘটনার বিচার বাংলাদেশেই হবে।

আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঞ্চালনায় ছিলেন ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে