অভিমানী সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের নিথর দেহে শোকের মাতম

এফএনএস | প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
অভিমানী সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের নিথর দেহে শোকের মাতম

দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার আর নেই। অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ঘরে ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর ভাড়া বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ‘অপ্সরা’ ভাড়া বাসায় পৌঁছালে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী শেফালী সরকার ও সন্তানরা। মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে শোকের মাতম।

বগুড়া থেকে ছুটে আসা বোন ভারতী সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাই কীভাবে মরলো, এখনো কিছুই জানি না।” আর সহকর্মীদের চোখেমুখে তখনও অবিশ্বাসের ছাপ। খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা তো উনার লেখার ভক্ত। তাঁর মতো খ্যাতিমান সাংবাদিকের এমন বিদায় মেনে নেওয়া কঠিন।”

পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মরদেহ সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে নেওয়া হবে এবং সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার।

৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক আজকের পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতাতেও তিনি লেখালেখি করতেন। নিখোঁজ হওয়ার দিনই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় তিনি নিজের সর্বশেষ নিবন্ধ মেইল করেন সেখানে। সেই লেখার ফুটনোটে তিনি উল্লেখ করেছিলেন— “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”

পরদিন শুক্রবার (২২ আগস্ট) অনলাইনে প্রকাশিত তাঁর সেই লেখা—“খোলা চিঠি”— নাড়া দেয় সাংবাদিক সমাজকে। সেখানে নিজের ও পরিবারের অসুস্থতা, মেয়ের পরীক্ষায় ব্যর্থতা, ছেলের চাকরি না হওয়া এবং দীর্ঘদিনের আর্থিক অনিশ্চয়তার বেদনা তুলে ধরেন তিনি। লিখে যান এক সাংবাদিকের হতাশা, অবহেলা আর অসম্মানের কথা।

বিভুরঞ্জন সরকারের ঘনিষ্ঠজন ও ব্যাংকার আসাদুজ্জামান মুকুল বলেন, “যায়যায়দিন পত্রিকায় তিনি যখন ‘তারিখ ইব্রাহিম’ নামে লিখতেন, তখন থেকেই আমরা মুগ্ধ। কিন্তু তাঁর মতো মেধাবী সাংবাদিক জীবনের শেষ সময়ে যে অভাব-অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেন, তা পুরো সমাজের জন্য সতর্কবার্তা।”

পরিবার জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের মোবাইল ফোনটিও ফেলে গিয়েছিলেন বিভুরঞ্জন। আর ফেরেননি তিনি। সেদিন রাতে তাঁর ছেলে ঋত সরকার রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

একজন সাংবাদিকের মৃত্যু কেবল ব্যক্তিগত বেদনা নয়, বরং পুরো পেশার অবহেলার প্রতিচ্ছবি। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা, পরিবারের কাছে ছিলেন ভরসা। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু রেখে গেল অসংখ্য প্রশ্ন, যার উত্তর হয়তো আজও অজানা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে