পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে রাজনৈতিক সমাবেশকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৮ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কোয়েটার শাহওয়ানি স্টেডিয়ামের কাছে সারিয়াব রোডের ব্যস্ত এলাকায় বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) এক রাজনৈতিক সমাবেশে এ বিস্ফোরণ ঘটে। পরদিন বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বখত মুহাম্মদ কাকার নিহত ও আহতদের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গুরুতর আহত আটজনকে কোয়েটার ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে এবং পুরো ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কাকার বলেন, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কারণে হামলাকারী সমাবেশস্থলের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও বাইরে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি গুরুতর আহতদের প্রয়োজনে করাচিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হামলার নিন্দা জানিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট জারদারি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, “নিরীহ নাগরিকদের ওপর এ হামলা কাপুরুষোচিত ও নিন্দনীয়। সন্ত্রাসীরা বেলুচিস্তানের শান্তি ও উন্নয়নের শত্রু। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব যতক্ষণ না এ অভিশাপ নির্মূল হয়।”
এদিকে, পাকিস্তানের কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও সন্ত্রাসবিরোধী ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আত্মঘাতী হামলাকারীর দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলা বাড়ছে। ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (পিআইসিএসএস) এর তথ্যানুযায়ী, কেবল জুন মাসেই দেশটিতে ৭৮টি হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৫৩ জন নিরাপত্তা সদস্য ও ৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক। এ সহিংসতায় আহত হন আরও ১৮৯ জন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক হামলা পাকিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির আরেকটি প্রমাণ। বিশেষত বেলুচিস্তানে রাজনৈতিক কার্যক্রমকে লক্ষ্য করে বারবার হামলার ঘটনা প্রমাণ করছে, দেশটির সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযান আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।