পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ: প্রশাসক নিয়োগ ও নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম
পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ: প্রশাসক নিয়োগ ও নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পরিবর্তন আসছে। কিছুদিন ধরে চলা আলোচনা ও শুনানির পর, সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ উদ্যোগটি মূলত দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত এসব ব্যাংকের পুনর্গঠন এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বোর্ড সভায় গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পাঁচটি ব্যাংক হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এবং এক্সিম ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংকে একটি প্রশাসক টিম থাকবে, যাতে আরও চারজন কর্মকর্তা সহায়তা করবেন।

একীভূত হওয়ার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা:
এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে যাবেন। তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে এবং কোনো ক্ষমতা থাকবে না। যদিও ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষত, একীভূত হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর সমস্ত সম্পদ ও দায়ভার স্থানান্তরিত হবে নতুন গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ এর অধীনে। পরবর্তীতে এটি একটি বেসরকারি ব্যাংকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সরকার প্রথমে নিজের বিনিয়োগ ফেরত নেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রায় ৪৮% থেকে ৯৮% ঋণ খেলাপি রয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতে এক বড় ধরনের ঝুঁকি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই অঙ্কের মধ্যে সরকার ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে।

সরকারের হস্তক্ষেপে দুর্নীতির অবসান:
এ পাঁচটি ব্যাংক বেশ কিছু বছর ধরে শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, বিশেষত এস আলম গ্রুপ এবং নাসা গ্রুপ। এই ব্যাংকগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তারা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এসব ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছিল না এবং ঋণ সংস্করণের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ব্যাংক খাতে পুনর্গঠন সম্ভব হবে।

একীভূতকরণের পরবর্তী পদক্ষেপ:
একীভূতকরণের পর, ব্যাংকের শেয়ারধারীদের শেয়ার শূন্য ঘোষণা করা হবে। তবে, বড় অঙ্কের আমানতকারীদের জন্য শেয়ার দেওয়া হবে এবং ছোট আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত নিতে পারবেন। আমানতকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, একীভূতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, নতুন গঠিত ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এর মধ্যে থাকবে:

  •  গ্রাহকদের অর্থ নিরাপদে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা।
  •  ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার।
  •  বড় অঙ্কের ঋণের খেলা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে