ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই ঘোষণার পরদিন সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) লন্ডনে ফিলিস্তিন দূতাবাসের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সিনিয়র কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সংসদ সদস্য এবং ফিলিস্তিনি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট বলেন, “ব্যালফোর ঘোষণার রাজধানীতেই আজ ইতিহাসের অন্যায় সংশোধন হলো। এই স্বীকৃতি শুধু প্রতীকী নয়, বরং আমাদের অস্তিত্ব, মর্যাদা ও স্বাধীনতার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” তিনি আরও বলেন, গাজায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় হাজারো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, পশ্চিম তীরে চলছে দখলদারিত্ব ও নিপীড়ন। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “দুই-রাষ্ট্র সমাধানের আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এখনই সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার।” স্টারমার উল্লেখ করেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি বহন করছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ইয়েভেট কুপার জানান, চরমপন্থী শক্তিগুলো দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। তাই যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতি শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নৈতিক দায়বদ্ধতার অংশ। যদিও কবে পূর্ব জেরুজালেমে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস খোলা হবে তা স্পষ্ট নয়, তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
লন্ডনের এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন। ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তে জাতীয় কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত জোমলট বলেন, “এই ভূমিতে বেঁচে থাকার আছে অনেক কারণ।”
উল্লেখ্য, একই দিনে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকটে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে অনেকেই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
খবর: আল জাজিরা