গ্যাস সংকট মোকাবিলায় করণীয়

এফএনএস
| আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম | প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
গ্যাস সংকট মোকাবিলায় করণীয়

দেশে গ্যাসের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশীয় কূপগুলো থেকে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ১৭৩ মিলিয়ন ঘনমিটার। বর্তমানে এই উৎপাদন নেমে এসেছে ২০ হাজার মিলিয়ন ঘনমিটারের নিচে। নতুন কূপ থেকে উত্তোলন না বাড়াতে পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিক খাতে গ্যাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। দৈনিক চাহিদা যেখানে চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে সরবরাহ হচ্ছে গড়ে দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসছে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে। তবে এ আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল-দেশীয় গ্যাসের প্রতি ঘনমিটার যেখানে তিন টাকা, সেখানে এলএনজির খরচ প্রায় ৫৫ টাকা। শুধু গত সাত অর্থবছরেই এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এ বোঝা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও প্রবল চাপ তৈরি করছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলন না বাড়ানো যায়, তবে আগামী আট বছরের মধ্যে দেশীয় মজুদ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সংকটে বন্ধ বা আংশিক চালু আছে। এতে শিল্প উৎপাদনও ৩০-৫০ শতাংশ কমে গেছে। এ অবস্থায় উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো টেকসই সমাধান হতে পারে না। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, দীর্ঘদিন দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আমদানিনির্ভর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে এখন কূপ খনন ও অনুসন্ধানে জোর দিতে হলেও সময় ও অর্থ দুটোই বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকার ১০০টি নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে এবং পুরনো কূপ সংস্কারের কাজও চলছে। তবে কেবল উদ্যোগ নিলেই হবে না, এগুলো দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। গ্যাস খাতে স্বচ্ছতা, পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা এবং বিকল্প জ্বালানির দিকে মনোযোগ এখন সময়ের দাবি। ভোলা ও সিলেট অঞ্চলের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো দ্রুত উৎপাদনে আনা দরকার। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সমাধান মিলবে না। অর্থনীতি, শিল্পোৎপাদন ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে সচল রাখতে জ্বালানি নিরাপত্তা অপরিহার্য। সঠিক নীতি ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া গ্যাস সংকট আরও গভীর হলে এর অভিঘাত পড়বে পুরো অর্থনীতিতে। সময় নষ্ট না করে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।