জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে দুর্নীতি

সম্পাদকীয় | প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে দুর্নীতি

বাংলাদেশের বৈদেশিক আয় নির্ভরশীলতার বড় একটি অংশ প্রবাসী আয়ের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়ে আসছে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ খাতকে ঘিরে একাধিকবার দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক হাজার ১৫৯ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১৩টি মামলা করেছে-এমন সংবাদ আবারও গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ আদায় করেছে শ্রমিকদের কাছ থেকে। পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সরকারি ফির পাশাপাশি নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে তা আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়েছে। এই অনিয়ম শুধু শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। যে শ্রমিকরা ঋণ নিয়ে বিদেশে গেছেন, তাঁদের অনেকেই চুক্তির বাইরে ব্যয়ভার বহন করে দুঃসহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। দুদক অভিযোগপত্রে যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা দেখায় এ খাতের নীতিনির্ধারণ ও তদারকির জায়গাগুলো কতটা দুর্বল। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পরিবর্তে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম ঝরানো অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ সব অপকর্ম নাকি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে করা হয়েছে। এর ফলে প্রশ্ন জাগে-তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা কোথায়? শ্রম রপ্তানি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুর্নীতি নতুন নয়। এর আগে একই ধরনের অভিযোগে আরও মামলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যার মূলে পৌঁছানো এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা এখন পর্যন্ত কার্যকরভাবে সম্ভব হয়নি। ফলে এ ধরনের সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। একদিকে যেমন প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা ঝুঁকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের আস্থা কমছে। অতএব, এ মুহূর্তে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। মামলার প্রক্রিয়া যেন ধীরগতি বা প্রভাবের কারণে ভেস্তে না যায়, সে বিষয়টি দেখা জরুরি। পাশাপাশি শ্রম রপ্তানি ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি নির্ধারিত ব্যয়ের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে কঠোর নজরদারি দরকার। এ খাতের ডিজিটাল মনিটরিং, শ্রমিকদের জন্য সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন হতে পারে। জনশক্তি রপ্তানির খাত শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, দেশের সুনাম ও লাখো পরিবারের জীবিকার সঙ্গে জড়িত। তাই এটিকে ঘিরে কোনো প্রকার দুর্নীতি সহ্যযোগ্য নয়। এবার যদি প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়, তাহলে শ্রম রপ্তানি খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম রোধে তা হতে পারে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে