পিরোজপুরের নাজিরপুর মিনি স্টেডিয়াম এখন এক করুণ বাস্তবতার নাম। ১৯৮৩ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়াম ছিল একসময় উপজেলার ক্রীড়া সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু চার দশক পর আজ এটি গরু-ছাগলের চারণভূমি, মাদকসেবীদের আড্ডাখানা এবং পরিত্যক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জলাবদ্ধতা, ভাঙা বেঞ্চ, ফাটল ধরা গ্যালারি-সব মিলিয়ে এটি এখন ক্রীড়াঙ্গনের অবক্ষয়ের প্রতীক। ২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে সীমিত পরিসরে ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নামে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছিল-দুই কক্ষবিশিষ্ট ভবন, একটি শৌচাগার এবং কয়েকটি বেঞ্চ। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। দশকের পর দশক অবহেলায় পড়ে থেকে ভবনগুলো এখন জরাজীর্ণ, দেয়ালে শেওলা, চারপাশে ময়লার স্তূপ। মাঠের কোনো সাইনবোর্ড নেই, এমনকি স্থানীয় অনেকেই জানেন না এটি আসলে একটি স্টেডিয়াম। এই অবস্থা শুধু অবকাঠামোগত অবহেলার ফল নয়; এটি পরিকল্পনাহীনতা ও প্রশাসনিক উদাসীনতারও প্রতিফলন। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই, তরুণদের ক্রীড়াচর্চার কোনো পরিবেশ নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ-মাঠ ব্যবহারের পরিবর্তে এটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলার পরিবর্তে সেখানে বাড়ছে সামাজিক বিপর্যয়। নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্টেডিয়াম সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, তবে বাস্তবায়নই মুখ্য। কারণ, প্রস্তাব ও কাগুজে প্রতিশ্রুতির ভরসায় মাঠ টেকে না, তরুণ সমাজও পথ হারায়। গ্রামীণ ক্রীড়াঙ্গন শুধু খেলোয়াড় তৈরির ক্ষেত্র নয়; এটি সামাজিক বন্ধন ও যুবসমাজকে ইতিবাচক পথে রাখার শক্ত ভিত্তি। নাজিরপুরের মতো জায়গায় একটি সক্রিয় ক্রীড়া অবকাঠামো থাকলে স্থানীয় তরুণেরা মাদক বা বেকারত্বের ফাঁদে না পড়ে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারত। সরকারের প্রত্যেক উপজেলায় একটি মিনি স্টেডিয়াম উদ্যোগ বাস্তবায়নের ঘোষণার প্রায় এক যুগ কেটে গেছে। এখন সময় এসেছে ঘোষণার নয়, বাস্তব ফল দেখানোর। নাজিরপুর মিনি স্টেডিয়ামের পুনর্গঠন হতে পারে সেই পরিবর্তনের সূচনা। টেকসই সংস্কার, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও স্থানীয় ক্রীড়া কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়েই এই স্টেডিয়াম ফিরে পেতে পারে তার হারানো প্রাণ। একটি স্টেডিয়াম কেবল মাঠ নয়-এটি আশা, উদ্যম ও সম্ভাবনার প্রতীক। সেই সম্ভাবনা যেন অবহেলায় আর না হারায়।