বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে, যা শুধু প্রাণহানি নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্যও বড় হুমকি। বিগত এক যুগে সড়কে ৬৭ হাজারের বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও দেড় লাখের বেশি। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি মৃত্যুই একটি পরিবার ধ্বংসের গল্প। সড়ক অবকাঠামো সমপ্রসারিত হলেও ব্যবস্থাপনায় নেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। মহাসড়কে ছোট যানবাহনের চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, বেপরোয়া গতি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা- সব মিলিয়ে সড়ক এখন অনিয়ন্ত্রিত ও বিপজ্জনক। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, দেশের ২১টি স্থান সড়ক দুর্ঘটনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, যেখানে পাঁচ বছরে ১৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিআরটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৬৪ লাখ হলেও বাস্তবে আরও ৭০ লাখ অবৈধ তিন চাকার যানবাহন ও বিপুলসংখ্যক ব্যাটারি চালিত রিকশা সড়কে চলছে। এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। অদক্ষ চালক ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি যেন সড়কে না নামতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শহর ও মহাসড়কে সিসিটিভি নজরদারি বাড়িয়ে নিয়মভঙ্গকারীদের তাৎক্ষণিক জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির শিকড় না কাটলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। সড়ক পরিবহণ খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত জাতীয় কৌশল- যেখানে পুলিশ, বিআরটিএ, স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজ একযোগে কাজ করবে। সড়ক নিরাপত্তা শুধু প্রশাসনিক নয়, সামাজিক সচেতনতার বিষয়ও। তাই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে যুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াতে না পারলে, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামবে না। এখনই সময়, সড়ককে নিরাপদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা ও জনসম্পৃক্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।