রেলপথে ঝুঁকি: উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণের সংস্কৃতি

এফএনএস
| আপডেট: ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম | প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
রেলপথে ঝুঁকি: উন্নয়ন নয়, প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণের সংস্কৃতি

বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের অন্যতম জনবান্ধব পরিবহন খাত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই খাত আজ এক গভীর অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি। সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৬৪ শতাংশ রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ট্রেন চলাচলকে নিরাপদ রাখতে যেখানে নিয়মিত সংস্কার ও তদারকি অপরিহার্য, সেখানে নতুন প্রকল্পের জৌলুসে পুরোনো অবকাঠামো যেন হারিয়ে যাচ্ছে অগ্রাধিকারের বাইরে। গত দেড় দশকে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও জরাজীর্ণ রেলপথ ও সেতুগুলোর অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। কোথাও নুড়িপাথরের ঘাটতি, কোথাও মাটি সরে যাওয়া, আবার কোথাও নাট-বল্টু ও ক্লিপ পর্যন্ত নেই-এমন বাস্তবতা রেলওয়ের নিরাপত্তাকে ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিছু অংশে ট্রেন চলছে স্বাভাবিক গতির মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশে, যা রেলওয়ে ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতার পরিচায়ক। রাজশাহী-আব্দুলপুর কিংবা সিলেট-আখাউড়া অংশে বারবার ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এবং সাধারণ মানুষের সতর্কতায় বড় বিপর্যয় এড়ানোর ঘটনাগুলো রেলওয়ের নাজুক অবস্থা স্পষ্ট করে। এই বাস্তবতা শুধু অবকাঠামোগত নয়, এটি ব্যবস্থাপনা সংকটেরও প্রতিফলন। জনবল ঘাটতি, বাজেটের সীমাবদ্ধতা, এবং রক্ষণাবেক্ষণে অনাগ্রহ-সব মিলিয়ে রেলওয়ে যেন প্রতিনিয়ত ঝুঁকির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতের কাজ চলছে। তবে এসব উদ্যোগ স্থায়ী নয়; অনেক ক্ষেত্রে তা ‘জোড়াতালি’ পর্যায়ের। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ যদি কেবল নতুন লাইন বা স্টেশন নির্মাণেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে পুরোনো রেলপথের অব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। রাষ্ট্রীয় বাজেটে রেলওয়ের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ ব্যয় হয় নতুন প্রকল্পে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত অর্থ তুলনামূলকভাবে অপ্রতুল। অথচ রেল নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা অপরিহার্য। বাংলাদেশের জনগণের আস্থা এখনো রেল ব্যবস্থার প্রতি অটুট। এই আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকল্পনির্ভর উন্নয়ন নয়, বরং নিয়মিত মেরামত, দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং প্রযুক্তিনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। উন্নয়নের সংজ্ঞা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন প্রতিটি ট্রেন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাবে-কোনো গ্রামবাসীর লাল কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনা ঠেকাতে হবে না।