গোয়ালন্দে সিসি ক্যামেরার অকার্যকারিতা: নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতি অগ্রহণযোগ্য

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
গোয়ালন্দে সিসি ক্যামেরার অকার্যকারিতা: নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতি অগ্রহণযোগ্য

চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি অপরাধী শনাক্তকরণকে যেমন দ্রুত করে, তেমনি অপরাধীর মনে ভয়ও সৃষ্টি করে। দেশের বিভিন্ন শহর এলাকায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই সিসি ক্যামেরার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। কিন্তু রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌর এলাকায় চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই। এতে জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উভয়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০১৬ সালে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ৩২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। এ উদ্যোগ তখন জননিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যেই সব ক্যামেরা একযোগে বিকল হয়ে যায়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো-ক্যামেরাগুলো মেরামত বা পুনরায় চালু করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অর্থ ব্যয় হলো, প্রকল্প শেষ হলো, কিন্তু জনগণের কোনো উপকার হলো না। এটি স্থানীয় প্রশাসনের পরিকল্পনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়বদ্ধতার ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ। গোয়ালন্দে কয়েক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও বিপণিবিতান রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। সেখানে জুয়েলারি দোকানই আছে অন্তত ৩৫টি-যা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে বারবার সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানানো হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশ্ন জাগে-জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই? পুলিশ স্বীকার করছে, সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধী শনাক্তকরণ সহজ হতো। তাহলে প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করার দায় কি শুধু প্রযুক্তিগত জটিলতায়, নাকি প্রশাসনিক অদক্ষতার মধ্যে? একটি কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ধারাবাহিক রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারি। পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নতুন করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এই ঘোষণা আশাব্যঞ্জক হলেও অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জনগণের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন রয়েছে-এবার কি পর্যাপ্ত পরিকল্পনা, মাননির্ণয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে? গোয়ালন্দের মানুষের নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়; এটি সাংবিধানিক অধিকার। প্রশাসনের উচিত স্থানীয় ব্যবসায়ী, পুলিশ এবং পৌর কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা করে দ্রুত সিসি ক্যামেরা পুনঃস্থাপন এবং সক্রিয় মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা। জনগণের নিরাপত্তায় এমন অবহেলা আর চলতে দেওয়া যায় না। গোয়ালন্দকে নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। নইলে অপরাধীরা সুযোগ পাবে, আর নাগরিকরা হারাবে নিরাপত্তার ন্যূনতম নিশ্চয়তাও।