জুলাই সনদ ও সরকারের দায়িত্ববোধ

এফএনএস | প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
জুলাই সনদ ও সরকারের দায়িত্ববোধ

জুলাই সনদকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখাকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার যে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারত, সেই দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে বরং বল ঠেলে দিয়েছে দলগুলোর কোর্টে। সরকার জানিয়েছে, দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে অভিন্ন প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে। এমন অবস্থান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়াতে পারে-এমন আশঙ্কাই এখন প্রবল। জুলাই সনদের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রায় সব পক্ষই। কেউ বলছে, সরকার ‘সাপ-লুডুর খেলা’ খেলছে; কেউ মনে করছে, এটি ১৯৭০ সালের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পুনরাবৃত্তি। মূল প্রশ্ন হলো-অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য কি শুধু দায়িত্ব এড়ানো, নাকি তারা সত্যিই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছে? রাজনৈতিক দলগুলোরও এখানে দায় কম নয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নয় মাস আলোচনা চালালেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দলগুলো এখনো পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জালে আবদ্ধ। এ অবস্থায় সরকারের ‘দলগুলোকেই সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া’ সিদ্ধান্তটি বাস্তবতাবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন-সংলাপ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ছাড়া সংকট নিরসন অসম্ভব। একটি অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কর্তব্য হলো-রাজনৈতিক স্থিতি রক্ষা করা এবং সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করা। সরকার যদি রেফারির ভূমিকা না নেয়, তবে সংঘাতের রেফারি কে হবে? রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের অবস্থানেই অনড়, তখন সরকারের নীরবতা বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া কার্যত অচলাবস্থাকে দীর্ঘায়িত করবে। একই সঙ্গে গণভোট ও সংবিধান সংস্কার বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা না থাকায় জনগণের মধ্যেও অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বাড়ছে। এখন জরুরি হলো, রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি ন্যূনতম আস্থার ভিত্তিতে আলোচনায় বসুক। একই সঙ্গে সরকারের উচিত হবে একটি নিরপেক্ষ, কিন্তু সক্রিয় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ফেরা। সংবিধান সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নটি শুধু দলগুলোর নয়-এটি রাষ্ট্র ও নাগরিকদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তাই এখানে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ কারও নেই। জুলাই সনদ নিয়ে এখন যে সাপ-লুডুর খেলা চলছে, সেটি বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎও সাপের মুখে পড়তে পারে। সময় এসেছে-দল ও সরকার উভয়েরই দায়িত্বশীলতা ও রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচয় দেওয়ার।