খাদ্য অধিদপ্তরে বদলি বাণিজ্য-দায় কার?

এফএনএস | প্রকাশ: ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৩৭ এএম
খাদ্য অধিদপ্তরে বদলি বাণিজ্য-দায় কার?

জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হলেও খাদ্য অধিদপ্তরে পরিবর্তনের হাওয়া তেমন লাগেনি। দৈনিক প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের প্রভাব বলয়ে থাকা কর্মকর্তারাই এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল। অভিযোগ উঠেছে, এদের ঘিরে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী ‘বদলি-পদায়ন সিন্ডিকেট’, যারা ঘুষ ও প্রভাবের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও এই সিন্ডিকেটের দাপট কমেনি-এটাই এখন উদ্বেগের বিষয়। ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মকর্তাদের বদলির নামে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমন সংগ্রহ অভিযানকে নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে বদলি ও পদায়ন সাময়িক স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়-যখন আদেশ জারি হওয়ার পরও মাঠ পর্যায়ে বদলির চাপ ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অব্যাহত থাকে, তখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কোথায়? খাদ্য অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকেই কর্মকর্তাদের জোর করে ‘পারিবারিক সমস্যা’ দেখিয়ে বদলির আবেদন লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অস্বীকৃতি জানালে হুমকি ও প্রশাসনিক জটিলতার ভয় দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, এসব বদলিতে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে। বদলি বাণিজ্যের এমন দৃষ্টান্ত শুধু দুর্নীতির উদাহরণ নয়, এটি প্রশাসনিক ন্যায্যতা ও কর্মপরিবেশের জন্যও বিপজ্জনক। খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। তবে কেবল ঘোষণায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। প্রশাসনে দায় নির্ধারণ ও জবাবদিহির কার্যকর ব্যবস্থা না হলে এই ‘বদলি বাণিজ্য’ চলতেই থাকবে। কারণ, দুর্নীতির মূল জায়গা যখন সিন্ডিকেটের মতো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়, তখন তা কেবল নির্দেশ নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা দিয়েই ভাঙতে হয়। খাদ্য অধিদপ্তর এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যখন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, মজুত ও বিতরণব্যবস্থায় সুশাসন অপরিহার্য। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যদি পদ-পদবি বাণিজ্যের শিকার হন, তবে এর প্রভাব পড়বে সরাসরি সংগ্রহ অভিযান ও খাদ্য মজুত ব্যবস্থাপনায়। এর ফলে কৃষকের স্বার্থও বিঘ্নিত হবে, সরকারি খাদ্য নীতিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। খাদ্য অধিদপ্তরের অনিয়মে সেই লক্ষ্য কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা এখনই পর্যালোচনার দাবি রাখে। সত্যিকারের সংস্কার মানে কেবল নতুন মুখ নয়, পুরনো পদ্ধতির পরিবর্তন। সেই সংস্কার যদি না আসে, তবে সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া তো দূরের কথা-দুর্নীতির এই চক্র আরও গভীরে শিকড় গাড়বে, যার বোঝা বইতে হবে রাষ্ট্র ও নাগরিককেই।