কিশোরগঞ্জের কৃতি ফুটবলার জীবনযুদ্ধে লড়ছেন আজও

এফএনএস (আমিনুল হক সাদি; কিশোরগঞ্জ) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:৪৯ এএম
কিশোরগঞ্জের কৃতি ফুটবলার জীবনযুদ্ধে লড়ছেন আজও

সাবেক কৃতী ফুটবল খেলোয়ার ও রেফারী নাজিম উদ্দিন ভুইয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি বিগত তিন বছর আগে  শরীরের বাল্ব অকেজো ও পায়ের হার ভেঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত বিছানায় শায়িত আছেন। বর্তমানে তিনি ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা: মোহাম্মদ সাঈদ আল মাহমুদ এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। এর আগে তিনি পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও সার্জারী বিভাগের  চিকিৎসক ডা: মো: দীন ইসলামের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরও আগে তিনি কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালের হাসপাতালের ডাঃ মোঃ সোলায়মান তানভীরের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে তার পরিস্থিতি অনেকটাই সংকটাপন্ন। জীবন যুদ্ধে লড়ে চলেছেন। এক সময়ে খেলাধুলার পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। পরিবারের সদস্যরা জানায়, খেলাধুলার জীবনে কোনো ডিগ্রী নেই। মাত্র মহিনন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী পড়াশোনা করেছিলেন। অভাব অন্টনের জীবনে খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রিকশা চালিয়ে সংসারের ভরনপোশন করতেন। এখন অসুস্থ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

১৯৬০ সালের ১ মার্চ জেলা সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়া গ্রামে আ.লতিফ ও লাল বানুর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন নাজিম উদ্দিন। গ্রামের কৃতি ফুটবলার মনজিউল আলমের কাছে ফুটবলের প্রশিক্ষণ পেয়ে দাপিয়ে বেড়িছেন জেলার আনাছে কানাছের খেলাধুলার মাঠ। 

৮০ দশকে মহিনন্দের অধুনালুপ্ত ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান উদয়ন ক্রীঢ়াচক্রের খেলোয়ার হিসেবে চাঁনমারী ফায়ারিং বাটে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এ সময় তার একাগ্রতা, ক্রীড়া কৌশল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি অগ্নিশিখা ক্লাব ও মহিনন্দ ফকির বাড়ী আনসার ভিডিপি ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলেছেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়া তিনি মহিনন্দের বিভিন্ন দলের হয়ে ভালো খেলা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে তিনি জেলা সদরের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস মাঠ, সাদুল্লাচর বাজার মাঠ, মাইজখাপনের সমিতি মাঠ, ফাত্য়ুাইর স্কুল মাঠে চন্দ্রাবতী স্মৃতি সংসদের বিপক্ষে খেলেছেন, করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি স্কুল মাঠ,গুজাদিয়াসহ বিভিন্ন মাঠে অনেকবার টিম নিয়ে খেলেছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি স্ত্রী মনোয়ারা ও ৮ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিজের মতো করে তাঁর তিন সন্তান রবিউল আওয়াল, নূর মোহাম্মদ ও মো: পলাশ উদ্দিনকেও দক্ষ খেলোয়ার হিসেবে গড়ে তোলেছেন। তারা আদর্শ যুব সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলাধূলা করে প্রশংসিত হয়েছেন। এক সময়ের মহিনন্দের কৃতি ফুটবলার প্রয়াত আ. সাত্তারের সাথেও খেলেছেন নাজিম উদ্দিন। তার খেলার সাথী ছিলেন ফুটবলার এরশাদুজ্জামান মিথুন, আলা উদ্দিন, আ.ছোবান, আ.গফুর ও উস্তাদ মনজিউল আলম। তাঁদের সাথে জেলার বিভিন্ন মাঠে ৩০টি টিমের সাথে সরাসরি খেলেছেন এবং ৫০টি খেলা পরিচালনা করে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এসব খেলাধুলায় বিশেষ অবদান রাখায় ওই সময়ের সিল্ড কাপ পুরস্কারও পেয়েছিলেন। 

মহিনন্দ ইউনিয়নের লোকজ শিল্পী ফিরুজ শাই বলেন, ভরা যৌবনে নাজিম উদ্দিন আমাদের গ্রামের আলোরমতি যাত্রাদলের নায়ক চরিত্রে অভিনয় করতেন। অভিনয়ে যাওয়ার পথে কোনো খেলার আসর দেখলেই জমিয়ে ফেলতেন। 

কৃতি ফুটলার মনজিউল আলম বলেন, নাজিম উদ্দিনকে আমিই ফুটবলের দলে যোগদান করাই এবং প্রশিক্ষণ দেই। বিভিন্ন খেলায় রেফারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নাজিম উদ্দিনকে দলে রাখলে সেই দলটিই বিজয়ী হয়ে যেতো। আমিও এখন চোখে দেখি না,নাজিম উদ্দিনও পায়ে ভর করে চলতে পারে না। তার জন্য অনেক মায়া হয়। 

মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদী বলেন, এক সময়ের সেরা খেলোয়ার নাজিম উদ্দিন ভাইকে দেখেছি সারাদিন রিকশা চালিয়েও ক্লান্ত হননি। দিনশেষে বিকেলেই চাঁনমারী ফায়ারিং বাটে ফুটবল খেলায় প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর এ কৃতিত্বের কারণে অনেকেই ভাড়ায় খেলতে নিতেন কিন্ত এখন তিনি খুবই অসুস্থ তাঁর পাশে সচ্ছল মানুষদের দাঁড়ানো উচিৎ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: কামাল উদ্দিন ও প্রতিবেশি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃতি ফুটবলার নাজিম উদ্দিন জীবনযুদ্ধে আজও লড়ছেন। দারিদ্রক্লিষ্ট পরিবারের নাজিম উদ্দিনের বসতভিটা ছাড়া নেই কোনো জমিজমা। এক সময়ে খেলাধুলার পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই চলতেন। বর্তমানে তাঁর উন্নত চিকিৎসার খরচ সংসারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় ফলে ভাঙ্গা পায়ের সমস্যা নিয়েই শায়িত থাকেন। আর্থিক স্বচ্ছলবানসহ যুব ও ক্রীঢ়া মন্ত্রণালয়েরসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নাজিম উদ্দিনের পাশে এগিয়ে আসার জন্য ক্রীড়ামোদীরা অনুরোধ জানিয়েছেন।


আপনার জেলার সংবাদ পড়তে