প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ প্রকল্প ছিল শিশুদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু পত্রপত্রিকায় উঠেছে এসেছে সুনামগঞ্জে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত এ প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পুরো উদ্যোগটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারি অর্থে নির্মিত এই ওয়াশব্লকগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই অচল হয়ে পড়ছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারছেন না-এ এক গভীর ব্যর্থতার চিত্র। সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১২টি ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, রড, সিমেন্ট, বালু থেকে শুরু করে ফিটিংস পর্যন্ত সব উপকরণে নিম্নমানের ব্যবহার হয়েছে। নির্মাণের পর অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক ওয়াশব্লক দেবে গেছে, মটর নষ্ট, ফিটিংস ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো-এই ব্যর্থতার দায় কেউ নিচ্ছে না। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারদের মনিটরিং করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এখানকার কিছু কর্মকর্তা নিজেরাই ঠিকাদারি বা কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সরকারি অর্থের একটি বড় অংশ অল্প কিছু ব্যক্তির হাতে চলে যাচ্ছে, আর প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুবিধা-থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক শুধু একটি অবকাঠামো নয়; এটি শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর শেখার পরিবেশের অপরিহার্য অংশ। যেখানে টয়লেট অচল, পানি সরবরাহ বন্ধ, সেখানে শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি-দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে যদি প্রতি কয়েক বছর পর একই স্থাপনা সংস্কার করতে হয়, তবে সেটি শুধু আর্থিক অপচয় নয়, বরং প্রশাসনিক অদক্ষতার প্রতিফলন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অনিয়ম অস্বীকার করলেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। এখনই যদি জবাবদিহিমূলক তদন্ত না হয়, তাহলে এই প্রকল্প দুর্নীতির আরেকটি নজির হয়ে থাকবে। প্রয়োজন, স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পের গুণগত মান যাচাই এবং অনিয়মে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। শিক্ষা অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অর্থ শুধু ভবন নির্মাণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ। দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে যদি সেই বিনিয়োগ নষ্ট হয়, তবে ক্ষতি হবে সমগ্র সমাজের। উন্নয়ন মানে শুধু কাজ শেষ করা নয়-টেকসই, স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে কাজ সম্পন্ন করাই প্রকৃত উন্নয়ন।