যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের দীর্ঘতম ৪০ দিনের সরকারি অচলাবস্থা বা ‘শাটডাউন’-এর অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দেশটির সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের মধ্যে একটি সমঝোতা হওয়ায় ফেডারেল দপ্তরগুলো পুনরায় চালু করার পথ খুলে গেছে। রোববার (৯ নভেম্বর) মার্কিন সিনেটে এ সংক্রান্ত একটি পদ্ধতিগত ভোটে বিল পাস হয়।
এ সমঝোতা অনুযায়ী জানুয়ারির মাঝামারি পর্যন্ত সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন তহবিল প্যাকেজ অনুমোদন করা হয়েছে। এতে খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি এবং ফেডারেল কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিলটি এখন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের মাধ্যমে শাটডাউন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস নতুন বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ হওয়ায় দেশজুড়ে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় ১৪ লাখ ফেডারেল কর্মীর মধ্যে কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে, কেউ আবার বেতন ছাড়াই কাজ করছিলেন। এতে বিমান চলাচল, খাদ্য সহায়তা ও সরকারি পার্ক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অচলাবস্থা দেখা দেয়।
শাটডাউনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৭০০টি ফ্লাইট বাতিল এবং প্রায় ১০ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফি সতর্ক করে বলেন, “এই সংকট অব্যাহত থাকলে থ্যাঙ্কসগিভিং ছুটির সময় বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে।”
সিনেটে অগ্রগতি আসে রিপাবলিকানদের সঙ্গে একদল মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সমঝোতার ফলে। তারা শর্ত দেন, আগামী ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি নিয়ে ভোটে অংশ নেবে রিপাবলিকানরা। এই প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে তারা সরকার পুনরায় চালুর পক্ষে ভোট দেন।
আলোচনার নেতৃত্ব দেন মেইনের স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাংগাস কিং। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শাটডাউন যথেষ্ট দীর্ঘ হয়েছে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য সরকার পুনরায় চালু করাই সবচেয়ে জরুরি।”
রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিনস জানান, প্রস্তাবটি পাস হলে ফেডারেল কর্মীরা বকেয়া বেতন পাবেন। তিনি বলেন, “সামরিক বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সীমান্ত টহল এজেন্ট, কোস্টগার্ড, ক্যাপিটল পুলিশের কর্মকর্তা সবাই তাদের প্রাপ্য বেতন ফিরে পাবেন।”
তবে সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এই চুক্তির বিরোধিতা করেন। তাঁর ভাষায়, “এটি কোনো সমাধান নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মুখে আত্মসমর্পণ।” একইভাবে ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও বলেন, “এ চুক্তি লাখো আমেরিকানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে আমরা শাটডাউন শেষের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।”
২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শাটডাউন ছিল ৩৫ দিন। এবার তা ছাড়িয়ে ৪০ দিনে গড়িয়েছে। ইতিহাসের এই দীর্ঘতম অচলাবস্থা শেষ পর্যন্ত সমঝোতার মাধ্যমে কংগ্রেসে সমাধানের পথে এগোচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।