কিশোরগঞ্জের সাবেক ইউএনও এডিসি মাসউদ পদায়িত ঝিনাইদহের ডিসি ও কিছু কথা

এফএনএস (আমিনুল হক সাদি; কিশোরগঞ্জ) : | প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম
কিশোরগঞ্জের সাবেক ইউএনও এডিসি মাসউদ পদায়িত ঝিনাইদহের ডিসি ও কিছু কথা

কিশোরগঞ্জ সদরের একজন জনপ্রিয় ইউএনও সাবেক এডিসি মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ একটি নাম একটি ইতিহাস। কিশোরগঞ্জে তাঁর জন্ম না হলেও জন্মভূমির মতোই এতদাঞ্চলের মানুষের মনের মণিকোঠায় ঠাই করে নিয়েছিলেন। চলতি বছরের গত ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে জানা গেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ (১৬০৫৩)কে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। ৩৬তম বিসিএস কর্মকর্তাকে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নভেম্বর মাসেই কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেন। আর এবারে অন্তবর্তী সরকার নভেম্বর মাসেই জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করার বিষয়টিও ইতিহাসের সাথে মিলে গেলো। সাবেক কর্মস্থল কিশোরগঞ্জ ও বাজিতপুরের দেশপ্রেমিক জনতা এই চৌকস ৩৬তম বিসিএস কর্মকর্তার পদোন্নতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পদায়নের খবর জেনেই নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ফেসবুকে স্টেটাস দিয়ে আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করছেন। তারা এই কর্মকর্তার সৃজনশীল কর্মকান্ড উপস্থান করে নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এ যেনো এই দেশ প্রেমিক অফিসারের প্রতি অন্য রকম কিশোরগঞ্জবাসীসহ দেশবাসীর আন্তরিকতার টান ফুটে উঠেছে। তারা লিখছেন মাঠ প্রশাসনের জনপ্রিয় এই কর্মকর্তাকে বর্তমার অন্তবর্তী সরকার ঝিনাইদহ জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পদায়ন করায় রাষ্ট্র উপকৃত হবে এবং তিনি তাঁর কর্মদক্ষতা দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদের দীর্ঘ বছরের কিশোরগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে খুব কাছে থেকে এই প্রতিবেদক দায়িত্ব সচেতন অফিসারের কর্মগুলো বাস্তবায়িত করতে দেখেছি। তিনি পেশাগত জীবন প্রথমে শিক্ষকতা এবং পরবর্তীতে মাঠ প্রশাসনে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

 মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ বিবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার লবখা গ্রামে সম্্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।  তাঁর পিতার নাম মোঃ আব্দুল হালিম। তিনি একজন ধার্মিক ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন এবং মাতৃভাষাসহ পাঁচটি ভাষা জানতেন। পেশাগত জীবনে তিনি প্রথমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। গত ৯ জুলাই, ২০১৫ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। মাসউদের মা মোছা: সালেহা বেগম একজন গৃহিনী, তিন বোনের মধ্যে প্রথম দুইজন গৃহিনী এবং ছোট বোন শিক্ষকতা করেন। মেঝো ভাই এমপিও-ভুক্ত কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন এবং তিনি ২০১৭ সালে পরলোক গমন করেছেন। বড় ভাই বাংলাদেশ পুলিশের একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ উপজেলার চাপিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে বিবাহ করেন। তাঁর স্ত্রী কাজী নুরানী সুলতানা নিশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তাঁর শ্বশুর সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। মাসউদের পিতৃকূল, মাতৃকূল ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও নিকটাত্মীয় সবাই ধর্মভীরু, দেশপ্রেমিক ও আদর্শ নাগরিক। তাদের কারোর বিষয়েই কোনো বিরূপ ভাবমূর্তি নেই।

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালের মধ্যে সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। সেই সময়ে তিনি সলিমুল্লাহ হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের হল শাখার দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সামাজিক ও সেবামূলক কাজে নিবেদিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে প্রথমেই তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের প্রভাষক পদে শিক্ষকতা করেন। ২০০৫ সালের ২ জুলাই থেকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে প্রভাষক পদে সরকারি তীতুমীর কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করে কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নভেম্বর ২০০৮ হতে আগস্ট ২০১২ পর্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাঁকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায় এবং পরে সাভার উপজেলার নবসৃষ্ট আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে পদায়ন করা হয় (সেপ্টেম্বর ২০১২ হতে নভেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত)। উভয় কর্মস্থলে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর নরসিংদী কালেক্টরেটে তাঁকে পদায়ন করা হয়। (নভেম্বর ২০১৪-জানু য়ারি ২০১৫)। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে প্রথমে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলায় (ফেব্রুয়ারি ২০১৪ হতে আগস্ট ২০১৬) এবং পরব র্তীতে কিশোরগঞ্জ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (সেপ্টেম্বর ২০১৬-অক্টোবর ২০১৮)। তারপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে অক্টোবর ২০১৮ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। জুন ২০২১ হতে প্রথমে সিনিয়র সহকারী সচিব পরবর্তীতে ০২ নভেম্বর ২০২২ হতে উপসচিব হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। গত ৭ই জুলাই ২০২৪ তারিখ হতে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিব র্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার পর এবারে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

তিনি ঢাকার সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ঢাকার শাহবাগের সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি হতে আইন ও প্রশাসন কোর্স, ভারতের উত্তরাখন্ডের মুসৌরিতে মিড-ক্যারিয়ার ট্রেনিং প্রোগ্রাম, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কোর্স, অফিস ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট কোর্স, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্সসহ সকল প্রযোজ্য ও প্রয়োজনীয় আবশ্যিক এবং পেশাগত প্রশিক্ষণ সুসম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও সরকারের নানা প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাঠ প্রশাসনে সুনাম কুড়িয়েছেন।

তিনি কিশোরগঞ্জ জেলায় দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করার সুবাদে জেলার সকল অঙ্গনে কাজ করার সুযোগ পান এবং তাঁর সর্বোচ্চ প্রয়াস ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে জেলার প্রায় সকল ক্ষেত্রে বিরল অবদান রাখেন। চাকুরী জীবনের প্রথমে কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জেল-সুপারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তখন কিশোরগঞ্জ কারা অভ্যন্তর পরিচ্ছন্ন করে সেখানে সুদৃশ্য বাগান তৈরি ও কারাগারে শৃঙ্খলা আনয়নে অবদান রাখেন। তাছাড়া বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে জেলার এ স্কুলটিতে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে কিশোরগঞ্জ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় জেলায় শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। তাছাড়া একই সময় কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ডিজিটাল ওয়েব পোর্টাল তৈরিতে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাঁর অধিক্ষেত্রের প্রতিটি ইউনিয়নে দুঃস্থ, প্রসূতি নারী ও অসহায় রোগীদের জন্য নামমাত্র ভাড়ায় চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস দেওয়ার জন্য চালু করেন গ্রামীণ অ্যম্বুলেন্স। তেমনিভাবে প্রতিটি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে স্কুলব্যাগ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেন। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ এবং স্কুল গুলোতে মিড-ডে মিলের বাস্তবায়ন করেন। উপজেলার আওতায় প্রতিটি স্কুল ও অফিসে বিনামূল্যে মানসম্পন্ন ডাস্টবিন বিতরণ করেন। বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার জন্য সদর উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে তালগাছ রোপণ ও পরিবেশকে সবুজায়ন করতে বিভিন্ন বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেন। সরকারের নির্দেশনার আলোকে পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনা ও নদীর পাশে বনায়ন তৈরিতে অবদান রাখায় বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক তিনি "পরিবেশ ও কৃষিতে" বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হওয়ার সম্মান অর্জন করেন।

পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে মসজিদ, মন্দির, শ্মশান, সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ  জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় তাঁকে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় জেলা প্রশাসক পরিবেশ পদক ২০২০ প্রদান করেন। কিশোরগঞ্জ জেলায় কর্মকালে তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পরিবেশ ও নদী রক্ষা, খাস জমি উদ্ধার, আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। তিনি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সমন্বয় করে দায়িত্বপালনে সক্ষমতা প্রদর্শন করেন। তিনি সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

তিনি কিশোরগঞ্জ ক্লাব ও কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে দীর্ঘ সময় যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেন। তিনি অতিমারী কোভিডের প্রাদুর্ভাবের সময় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শক্রমে কিশোরগঞ্জ জেলায় নিবিড়ভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা, হটস্পটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ, সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং নাগরিক প্রয়োজনে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, নরসুন্দা নদীর পরিচ্ছন্নতা করাসহ অসংখ্য সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাজিতপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা ভূমি অফিস ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেন। উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অধিকাংশ মৌজা ম্যাপ না থাকায় ভূমি পরিমাপ করা ও সরকারি স্বার্থ রক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। তিনি জেলা অফিস ও ঢাকার জরিপ অধিদপ্তর থেকে সকল মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে বিতরণ করেন। তাছাড়া ভূমি অফিসগুলোর এসএ ও আরএস খতিয়ান বইগুলো ভালোভাবে বাঁধাই করে সংরক্ষণ করেন। উপজেলার খাস জমি রক্ষা, সরকারি ভূমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং জরাজীর্ণ পুরাতন ভূমি অফিস সংস্কার করে অফিসটিকে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন। ফলে পরের বছর বাজিতপুর উপজেলা ভূমি অফিস, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে নির্বাচিত হয়।

সম্প্রতি ফেসবুক ও সামািজক যাগােযাগ মাধ্যেম  মো: আব্দুল্লাহ আল মাসউদ (বর্তমানে জলা প্রশাসক হিসেবে পদায়নপ্রাপ্ত) বিরুেদ্ধ কিছু মিথ্যা ও বিভ্রন্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে তাঁর চরিত্র ও  পেশাদরিত্বে কলুষিত করার অপেচষ্টা চালাচ্ছে। তাঁর মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ, সৎ এবং জনবান্ধব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন ভিত্তিহীন অপপ্রচার অত্যন্ত নিন্দনীয়। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এসব বানোয়াট অভিযোগের আড়ালে থাকা আসল সত্য। উদাহারন স্বরুপ বাজিতপুরের এসিল্যান্ড অফিসের গাছের ডাল কাটার ঘটনা। এ ঘটনার প্রকৃত ঘটনা বািজতপুের মাসউদ সাহেব চাকুরীকালীন সময়ে গাছের ডাল কাটার বিষয়ে স্বতঃপ্রেণোদিত হননি। তৎকালীন সরকরি কিমশনার (ভূমি)  মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ নিজ উদ্যেগে গাছের ডাল কাটেননি।  জনগণের জীবেনের নিরাপত্তার প্রশ্নে পূর্বের বছর এই  রেইন্ট্রির একটি ডাল পড়ে একটি গরু মারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে আ রেকটি ডাল মরে যািচ্ছল এবং  সেখানে মানুষ চলাচল করত। যেকোনো সময় বড় ধরেনর দুর্ঘটনা ঘটে মানুেষর জীবনহানি হতে পারত। তাই তিনি জনগেণর অনুেরাধ এলাকার মুরুব্বীদের ও জনগণ  মৌখিকভাবে এসি ল্যান্ডের কাছে জীবেনর নিরাপত্তাজনিত কারণে ডালটি অপসারেণর জন্য অনুেরাধ জানান। সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই জনস্বার্থমূলক কাজে তিনি সম্পূর্ণ সরকরি বিধিবিধান অনুসরণ করেন। উপেজলা কমিটির অনুেমাদন লাভের পর  টেন্ডারের মাধ্যেম ডালটি ১৮,০০০/- (আঠােরা হাজার) টাকায় বিক্রি করা হয়। এই সম্পূর্ণ অর্থ তৎকালীন সরকারি  কোষাগারের (খাতায়) জমা  দেওয়া হয়েছিল। সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষে তিনি  টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করেন এবং টেন্ডারটি  কে পেয়েছে  সে বিষয়েও তিনি অবগত ছিলেন না । এটাই তাঁর  পেশাদরিত্ব ও সততার প্রমাণিত হয়। আব্দুল্লাহ আল মাসউদ তাঁর কমজীবনে  যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই তাঁর দক্ষতা,নিষ্ঠা এবং জনমুখী কাজের মাধ্যম সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।  তিনি জেলা শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর দুপাশের প্রচুর গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী ছিলেন। শুধু তাইনা জেলা সদরের প্রতিটি ইউনিয়নের অনেক রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। 

কিশোরগঞ্জের উন্নয়েন দৃশ্যমান ভূমিকা: কিশোরগঞ্জ সদর উপেজলায় ইউনএনও এবং সাবেক এডিসি হিসেবে থাকাকালীন সময়ে পাগলা মসিজদ,  শোলািকয়া ঈদগাহ মাঠ এবং নরসুন্দা নদীসহ  জেলার উন্নয়েন তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত দৃশ্যমান ও প্রশংিসত। জনিপ্রয়তার প্রমাণ- যখন তাঁেক  কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলি করা হয়, তখন স্থানীয় জনগণ তাঁেক  ফেরানোর জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন।  এটি তাঁর জনবান্ধব এবং সফল নৃতৃত্বের এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত বটে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। নবসৃষ্ট এই অফিসের সেবা গ্রহীতাদের প্রাপ্য সকল সেবা প্রদানের প্রস্তুতি সুসম্পন্ন করেন। সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে পদোন্নতির পূর্ব পর্যন্ত নতুন এ অফিসকে ভূমি সেবা প্রদানে একটি অনন্য অফিসে রূপদান করেন। এ সময় সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে নবসৃষ্ট এ অফিসটি বেশ সমাদৃত হয়। বিভাগীয় কমিশনার এ সময় অফিসটি পরিদর্শন করে অফিস কার্যক্রমে অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এমনকি আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল থেকে অবমুক্তির প্রাক্কালে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিক মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান অতিথি করে মাসউদকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান এবং অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বিদায়ী শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

২০১৫ ও ২০১৬ সালে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেন। তিনি মুলাদী উপজেলাকে বরিশাল বিভাগে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। পরিবেশ রক্ষায় তাঁর গৃহীত উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনা, নদী দখল রোধ করা, পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম। পরিবেশ রক্ষায় তাঁর এসব উদ্ভাবনী কাজের জন্য তিনি ২০১৬ সালে “পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ” ক্যাটাগরিতে বরিশাল বিভাগে শ্রেষ্ঠ অফিসার প্রধান হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ, ক্রীড়া, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি, আশ্রয়ন প্রকল্পসহ সা র্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেন। তিনি মুলাদী উপজেলাকে বরিশাল জেলায় উদ্ভাবন ও জনমুখী সেবা সমপ্রসারণে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান এবং ইউনিয়ন গুলোকে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন। তিনি উদ্ভাবনী সেবা প্রদানে জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পরপর দুই বছর নির্বাচিত হন।

তাছাড়া ২০১৬ সালে জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী “জেলা প্রশাসক ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৬” আয়োজন করা হয়। এই ফুটবল টুর্নামেন্টের মূল আয়োজক ছিলেন বরিশাল জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক এবং বর্তমান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান মহোদয়। উক্ত ফুটবল টুর্নামেন্টে মাসউদের নেতৃত্বে মুলাদী উপজেলা সার্বিকভাবে অংশগ্রহণ করে বেস্ট ভেন্যু অ্যাওয়ার্ড এবং ফেয়ার পে­অ্যাওয়ার্ড এর মত দুটি মূল্যবান অ্যাওয়া র্ড প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করে।

 আপাদমস্তক শিল্পানুরাগী, সংস্কৃতিমনা এবং সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তি আব্দুল্লাহ আল মাসউদ। তাঁর গবেষণা কর্মের অনন্য একটি কাজ হলো : ওহপড়সব এবহবৎধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঐড়ংঃ ঈড়সসঁহরঃরবং ড়ভ ঃযব জবপড়মহরুবফ ঞড়ঁৎরংঃ ঝঢ়ড়ঃং নু ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎধষ ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ ড়ভ ঘবধৎনু জড়ধফং ধহফ ঐড়সবংঃবধফং: অহ অংংবংংসবহঃ ঝঃঁফু ধঃ টশযরুধ, ঈড়ী’ং ইধুধৎ ভড়ৎ ঝসধৎঃ ধহফ চধৎঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ঞড়ঁৎরংস তাছাড়া ২০০৬ সালে তিনি ঝঁৎাবু ড়হ ঃযব ঝঃৎববঃ ইবমমধৎং ড়ভ উযধশধ ঈরঃু নামে একটি জরিপ এবং গবেষণার কাজ করেন। লেখা-লেখির কাজেও তাঁর বেশ দখল রয়েছে। তাঁর সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় সংকলন গ্রন্থ হলো 'রবীন্দ্র নজরুলের সেরা উক্তি’। এছাড়াও তিনি জেলার প্রথম দৈনিক আজকের দেশ পত্রিকায় উন্নয়নমুলক ফিচার লিখেছেন। 

তিনি দীর্ঘ সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সংগীত, নৃত্য, আবৃ্ত্িত, চিত্রাঙ্কন ও নাটকসহ শিল্প সাহি ত্যের সকল বিষয়ে কাজ করেছেন। জেলাশিল্পকলা একাডেমির সংস্কার, জাতীয় পর্যায়ে জেলার শিল্পীদেরকে বিজয়ী করা, শিল্পীদের ঢাকায় যাতায়াতসহ শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর দায়িত্ব কালে কিশোরগঞ্জ জেলা অধিকাংশ সময় শিল্প সাহিত্যে দেশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

মাসউদ পেশাগত জীবনে একজন সুনিপুন ক্রীড়াসংগঠক। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪৩তম এফটিসিতে ৪ গ্রুপের মধ্যে তাঁর নিজের বি গ্রুপকে ৪টি প্রতিযোগিতার মধ্যে ৩টিতে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারায় ম্যানেজার হিসেবে তিনি অনন্য মেডেল অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘ সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, জেলা রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ম্যারাথন, ফুটবল টুর্নামেন্ট, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবং বাংলাদেশ যুব গেমস- প্রভৃতি সফলভাবে আয়োজন করেন। সুসংগঠিত আয়োজনের কারণে জাতীয় যুব গেমস আয়োজক কমিটি কিশোরগঞ্জ  জেলাকে ৪টি ইভেন্টের প্রশিক্ষণ ভেন্যু হিসেবে নির্বাচন করে সম্মান প্রদান করেন।

তিনি মাঠ প্রশাসনে কর্মকালে স্কাউট আন্দোলনকে বেগমান করতে দীর্ঘ সময় ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করেছেন। তিনি উপজেলা স্কাউটের সভাপতি এবং জেলা স্কাউটের কমিশনার ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছেন। তিনি স্কাউটিং বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন কোর্স সম্পন্ন করেন এবং পরব র্তীতে ২০১৮ সালে স্কাউট ইউনিট লীডার বেসিক কোর্স সু-সম্পন্ন করেছেন। তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্কাউটিং আন্দোলনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কাব-স্কাউটিং, স্কাউট এবং রোভার স্কাউটকে বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন।

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে তিনি কাজ করেছেন। পদায়িত কর্মস্থলে সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সেবাগ্রহীতাগণ, কৃষক, শ্রমিক সকল  শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে তিনি সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাক্তন কর্মস্থলের অংশীজনদের কাছে জানতে চাওয়া হলে এই কর্মকর্তার সম্পর্কে ইতিবাচক বক্তব্য পাওয়া যাবে। আমরা তাঁর পদায়িত কর্মস্থলের পদোন্নতিতে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন তিনি যেনো সরকারের এই গুরু দায়িত্ব সুন্দর করে পালন করতে পারেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে