রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ, দ্রুত ফল প্রকাশ এবং প্রশাসনিক সেবায় দক্ষতা আনতেই এ উদ্যোগ। রোববার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকার সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার মান, পরীক্ষার সময়সূচি ও ফল প্রকাশের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন জটিলতার কারণে একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ছিল। তাই স্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামো এবং নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাই হতে পারে এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি প্রণয়ন করেছে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া। গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে খসড়াটি প্রকাশ করার পর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুধীজনসহ বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি মতামত জমা পড়ে। অনলাইন প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি তিনটি মতবিনিময় সভায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরাসরি মতামত দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং খসড়াটির পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করতে কিছু সময় লাগলেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে তারা বিশেষভাবে সতর্ক। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত সাত কলেজের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ২০২৪ ২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন এবং পাঠদানের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী শনিবার ২৩ নভেম্বর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ জানায়, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে তারা দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণই তাদের লক্ষ্য। মন্ত্রণালয় বলছে, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক কর্মচারীদের পদ সংরক্ষণ এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কার্যক্রমসহ নানা জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে তারা অত্যন্ত সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো না করে দায়িত্বশীল আচরণের প্রয়োজন রয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ—এই সাত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়। ইউজিসিই এই নাম প্রস্তাব করে।