ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের আশ্রয় আবেদনের অনুমোদন, বাতিল বা স্থগিত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন থেমে গেছে। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (ইউএসসিআইএস)-এর পরিচালক জোসেফ এডলো শুক্রবার এক্সে জানিয়েছেন, “যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে প্রত্যেক বিদেশি সর্বোচ্চ মাত্রায় যাচাই ও পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, ততক্ষণ সব সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে।”
এই ঘোষণা আসে কয়েক ঘণ্টা পর, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত হবে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, বুধবারের হামলায় আহত এক ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মারা গেছেন। হামলার জন্য এক আফগান নাগরিককে দায়ী করা হয়েছে।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নির্দেশনায় ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, আবেদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে পারবে, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছালে থামাতে হবে। সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, “একবার সিদ্ধান্তের পর্যায়ে পৌঁছালে, থামুন এবং স্থগিত রাখুন।”
ঘটনার পটভূমি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য—২০ বছর বয়সী স্পেশালিস্ট সারাহ বেকস্ট্রম এবং ২৪ বছর বয়সী স্টাফ সার্জেন্ট অ্যান্ড্রু উলফ—বুধবার হোয়াইট হাউসের কাছে গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরে বেকস্ট্রমের মৃত্যু হয়। হামলার সন্দেহভাজন, ২৯ বছর বয়সী আফগান নাগরিক রহমানুল্লাহ লাখানওয়াল, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে। তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপে ‘অপরাধ দমন’ ও অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের গণহারে বহিষ্কার, শরণার্থী সংখ্যা হ্রাস এবং স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের চেষ্টা। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আশা করি সব দেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের অধীনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবে।” আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, “অভিবাসীদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনও জানা যায়নি, তবে যে কেউ যেকোনো পটভূমি থেকে চরমপন্থায় জড়াতে পারে।”
সংশ্লিষ্ট ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসি জানিয়েছেন, আহত উলফ এখনও ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায়’ আছেন। নিহত বেকস্ট্রমের পরিবার এবং জনসাধারণের জন্য তারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তদন্তকারীরা হামলার উদ্দেশ্য জানতে দিনরাত কাজ করছেন।
ইউএসসিআইএসের এই নির্দেশনা এবং ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হয়ে গেছে, বিশেষত আফগান ও অন্যান্য ‘তৃতীয় বিশ্বের’ দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য। ১৯টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তান, কিউবা, হাইতি, ইরান, সোমালিয়া এবং ভেনেজুয়েলার নাম রয়েছে।