ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ুর মানের তালিকায় আধিপত্য বজায় রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণ বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন লোককে হত্যা করে। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। বায়ুদূষণজনিত রোগে বাংলাদেশে কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। ঢাকা বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান শহরগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে শুধু জনসংখ্যার চাপের কারণে নয়, বরং বায়ুদূষণের মাত্রার জন্যও আন্তর্জাতিক মহলে নজরে এসেছে। সকালে রাস্তায় বের হওয়া মানেই চোখে পানি আসা, গলায় চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা। ধূলি, ধোঁয়া এবং যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে শিশুদের স্কুলযাত্রা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। দূষিত বাতাস শুধু ফুসফুসকে নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করছে। দীর্ঘ সময় এ বাতাসে থাকা মানে শারীরিক ও মানসিক দুটোই ক্ষতির মুখে পড়া। ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ার মূল কারণগুলো হলো যানবাহনের ধোঁয়া। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি শহরে চলাচল করে। পুরোনো গাড়ি ও বাইক থেকে ছড়ানো ধোঁয়া বিশেষ করে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা যানবাহনের কারণে বৃদ্ধি পায়। প্লাস্টিক, পেইন্ট, ইলেকট্রনিকস ও ফার্নিচার শিল্পের ধোঁয়া শহরের বাতাসকে দূষিত করছে। অনিয়ন্ত্রিত শিল্পকারখানার ধোঁয়া স্থানীয় জনগণের জন্য বিপজ্জনক। খোলা স্থানে বর্জ্য পোড়ানো শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক ও পলিথিন পোড়ানো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। নগর পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ঢাকার পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা নেই। ফলে ধূলি ও ধোঁয়া ছড়ানো সহজ হচ্ছে। নাগরিকরা দূষণ কমানোর বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতন নয়। পলিউশন নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণের অভাব লক্ষ করা যায়। দূষিত বাতাসে দীর্ঘ সময় থাকা মানে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতি, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি। শিশুদের শ্বাসনালি ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বেশি। বৃদ্ধ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের জন্য বিপদ আরও গুরুতর। শুধু শারীরিক নয়, দূষণ মানসিক চাপও বাড়ায়। ঘুমের সমস্যা, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ও বেড়ে যায়। বায়ু দূষণের কারণগুলোই বলে দিচ্ছে এ দূষণ কমানো বা রোধ করা সম্ভব। কিছু নিয়ম, কিছু পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগই কমাতে পারে বায়ু দূষণ। শুধু স্থানীয়ভাবে ঢাকায় বায়ুদূষণ কমালে কাজ হবে না। এ জন্য আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ বন্ধ করার বিষয়ে আঞ্চলিকভাবেও উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে সকল দেশের একমত হওয়া প্রয়োজন।