স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ অস্ত্র হলো অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, যেটি ব্যর্থ হলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশে এই অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোগীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ বা ইনফেকশন মোকাবেলায় এটি আমাদের প্রধান হাতিয়ার। তবে, এই ‘মিরাকল ড্রাগ’-এর ভুল এবং অতিরিক্ত ব্যবহার আজ এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের জন্ম দিয়েছে, যার নাম অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যখন ব্যাকটেরিয়া সময়ের সাথে সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অর্জন করে। এর ফলে, একসময় যে ওষুধ দিয়ে সহজেই রোগ নিরাময় হতো, তা আর কাজ করে না। সাধারণ সংক্রমণও তখন প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য হুমকির একটি। সমপ্রতি প্রকাশিত গবেষণা পর্যালোচনা করলে জানা যায়, অসংখ্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা সেই বিভীষিকাময় সময় দেখতে পাব, যখন কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স চিকিৎসার অগ্রগতির গতি ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। সংক্রমণ যখন ওষুধে আর সাড়া দেয় না, তখন অস্ত্রোপচার, ক্যানসার চিকিৎসা বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো জটিল চিকিৎসাগুলোও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। দেশের হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশের শরীরে এখন আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক, অতিরিক্ত ও যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এখন দেশের জন্য একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অবশ্য, এ গবেষণায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পাওয়া গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার কমাতে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি এটি ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। ফার্মেসিগুলোকে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা প্রয়োজন। ইচ্ছামত এন্টিবায়োটিক না খাওয়া, এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে সবাইকে।