ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পরার আশঙ্কায় বরিশাল

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পরার আশঙ্কায় বরিশাল

বড় ধরনের ভূমিকম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বরিশাল শহর। এমন আশঙ্কা করেছেন নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকৌশল দপ্তরের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় আনুমানিক ৩৫ হাজারের বেশি ভবন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত হয়েছে। এর অনেকই উপকূলীয় নরম পলিমাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় সামান্য কম্পনেও এসব ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বহুতল ভবন নির্মাণে অনিয়ম এখন যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। ভিত্তি পরীক্ষা বা মাটি বিশ্লেষন ছাড়াই অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণ, অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা উঠিয়ে ফেলা, নিন্মমানের রড, সিমেন্ট ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, ভবনের ন্যূনতম দূরত্ব, ফাঁকা জায়গা এবং নিরাপত্তা মান অমান্য, দালালচক্রের মাধ্যমে দ্রুত ও অনিয়মিতভাবে অনুমোদন নেয়ার প্রবণতার মতো নানা উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, বরিশাল যদিও মধ্যম ঝুঁকি জোন। তারপরেও ঘণবসতি ও নরম পলিমাটির কারণে সামান্য কম্পনেও পুরোনো ও দুর্বল ভবনগুলো ধসে পরার আশঙ্কা রয়েছে। বিসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে-গত কয়েক বছরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ শুরু হলেও মালিকদের অনাগ্রহ, আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক চাঁপের কারণে তারা কাজ এগিয়ে নিতে পারেননি।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস \ সম্প্রতি ভূমিকম্পে বরিশাল নগরীর বেশকিছু ভবনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেয়াল, ছাদ, পিলারসহ বিভিন্ন অংশ। এরমধ্যে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে খোদ নগর ভবন। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই এটি ধসে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ফায়ার সার্ভিসের একার পক্ষে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পরবে।

সূত্রমতে, বরিশালের নাগরিকদের ভবন নির্মাণের অনুমোদনের দায়িত্বরত নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। নগর ভবনটি নির্মিত হয়েছে ১৯৯০ সালে। মাত্র ৩৫ বছরে যা হয়ে পরেছে বেহাল। সাম্প্রতিক পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবনটির বিভিন্ন কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পরেছে। বিম ও দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। প্রতিদিন এ ভবনেই সেবা নিতে আসেন নাগরিকরা। বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৪২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবন বাঁজি রেখে ওই ভবনেই কাজ করছেন।

মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই নগর ভবন ধসে পরার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রধান প্রকৌশলী মো. হুমায়ন কবির বলেন, আমরা এখন যে ভবনে অবস্থান করছি এটি পৌরসভার সময়ের ভবন। আমি যতটুকু জানি এ ভবন দুইতলা করার প্ল্যান ছিলো, পরে এটি তিনতলা করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি ও বরাদ্দের জন্য আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি।

সূত্রমতে, শুধু বরিশালের নগর ভবন নয়; ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি ভবন। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে নগরবাসী নিরাপত্তায় সেগুলো অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী। বরিশাল অধিকারের আঞ্চলিক প্রধান আজিজ সাহিন বলেন, যেই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো যতোদ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। অপসারণ করা না হলে, ভূমিকম্প হলে বরিশালের মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ৫৭ হাজার। এরমধ্যে ১৭ হাজার টিনশেড বাড়ি। বাকি ৪০ হাজারই ভবন। যেখানে বহুতল ভবনের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে