জোটের শরীক নয়। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীর কোন বিকল্প নেই। এলাকার উন্নয়ন ও তৃণমূলের নেতা কর্মীদের চাওয়া এটি। ধানের শীষের নিশ্চিত আসনটি কেন জোটকে ছেড়ে দিবেন? এমন মন্তব্য ও প্রশ্ন এখন স্থানীয় বিএনপি’র। তাদের ভাষায় সরাইলে আর পরগাছা নয়। অতীতেও বিএনপি আওয়ামী লীগ উভয় দলই এই আসনে পরগাছা প্রার্থী পেয়েছে। জাপাতেও মাঝে মধ্যে দেখা দিয়েছে এই রোগ। পরগাছা নামক রোগটি যেন কোন ভাবেই ছাড়ছে না সরাইলকে। আর জন্যই বারবার উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে সরাইল। অবশ্য সম্প্রতি বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়েছিলেন হাইকমান্ড। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকলকে বলে দিয়েছেন, দল যাকে মনোনয়ন দিবে সকলে মিলে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপি এখনো এই আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি। যদিও এই আসনে বিএনপি দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবের নাম চাউর হচ্ছে। তৃণমূল বিএনপি’র অনেক কট্রোর সমর্থকের মন্তব্য হচ্ছে- জোটকে মনোনয়ন দিলে এখানে জামায়াতের প্রার্থীর পাসের সম্ভাবনাই বেশী। বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন বা প্রার্থীর বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগরের একাংশ) আসনটিতে বিএনপি-ই জয়লাভ করে আসছে। তাদের জোটের প্রার্থী ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে বিশাল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। এটি বিএনপি বা ধানের শীষের আসন বলেই খ্যাতি রয়েছে। ২০১৮ সালে মহাজোটের প্রহসনের নির্বাচনে সমগ্র বাংলাদেশে বিএনপি’র মাত্র ৬ জন প্রার্থী পাস করেছিলেন। এরমধ্যে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন দলটির চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। হামলা মামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তার মাথায় নিয়েও নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছিলেন বিএনপি’র নেতা কর্মীরা। ওই নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার তথা ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারা প্রমাণ করেছিলেন এই আসনের মানুষ প্রয়াত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদর্শকে মনেপ্রাণে লালন করেন। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এই আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম দীর্ঘ সময় ধরে হোল্ড করে রাখায় নেতা কর্মীরা চিন্তিত, উদ্বিঘ্ন ও বিষন্ন। এরমধ্যে জোটের প্রার্থীর নাম চাউর হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি’র কর্মীদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যদিও অনেক নেতা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। আবার সুর পাল্টিয়ে আস্তে করে বলছেন আসনটি মূলত ধানের শীষের।
একটি প্রাইভেট ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড নিজসরাইল গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি’র কট্রোর সমর্থক মো. আব্দুর রহমান শাহ কালু মিয়া বলেন, ‘এই আসনটি শতভাগ ধানের শীষের। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী চাই। নতুবা বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা পদত্যাগ করা দরকার। পরগাছা নামক রোগে আর ভুগতে চাই না। জোটের প্রার্থী দিলে আমরা নেই। ফেলও করতে পারে। সারা বছর দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। আর ভোটের সময় উড়ে এসে জোড়ে বসবেন। এটা আমরা মানতে পারি না।’ নোয়াগাঁও ইউপি যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম বলেন, এই আসনে বিএনপি তাদের জোটের প্রার্থী দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। ধানের শীষের আসনে আমরা ধানের শীষের লোকের মনোনয়ন চাই। উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, আমরা ধানের শীষ প্রতীকের দলীয় প্রার্থী চাই। দলীয় সিদ্ধান্তে জোটের প্রার্থী হলে প্রতীকটা ধানের শীষ না থাকাটা হবে ক্রটিযুক্ত। আশা করছি বিএনপি সরকার গঠন করবেন। তাই দলীয় এমপি দিয়ে এলাকার যতটুকু উন্নয়ন হবে, জোটের এমপি’র দ্বারা ততটুকু সম্ভব নাও হতে পারে। সরাইল উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি’র সদস্য, ১/১১ এর কারানির্যাতিত নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, সমগ্র আসনের নারী পুরূষের ভাগ্যন্নোয়নের মাধ্যমে ফুটাতে চাইলে। দলীয় নেতা কর্মীদের দেড় যুগের দু:খ কষ্ট নির্যাতন নিপিড়ন লাঘব করতে এখানে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর কোন বিকল্প নেই। তারপরও দলের স্বার্থ ও সিদ্ধান্তকে আমরা মাথা পেতে নিব। সরাইল উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা জোটের প্রার্থী চাই না। আমরা বিএনপি দলীয় প্রার্থী চাই। গত ১৭টি বছর দলের নেতা কর্মীরা নানা ভাবে লাঞ্ছিত বঞ্চিত নির্যাতিত ও শোষিত হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে মাঠে ঘুমাতে হয়েছে। এ ছাড়া আমরা উন্নয়ন বঞ্চিত। নিজেদের দলীয় এমপি হলে দু:খ কষ্ট শেয়ার করা যাবে। সহজে কাছে গিয়ে মনের কথা বলা যাবে। এলাকার ও উন্নয়ন হবে। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়েছে সরাইল আশুগঞ্জের বিএনপি। তাদের মতে দীর্ঘ ১৫ বছর পর তাদের আকাশের সূর্য হাসছে। তাই তাদের সকলেরই প্রত্যাশা আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন পেতে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন দলটির ১১-১২ জন প্রার্থী। তাদের কথা হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে দল যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা দিবেন। জোট নামক ব্যাধি থেকে তারা মুক্তি চান।