ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মনোনীত টাঙ্গাইলের শাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মনোনীত টাঙ্গাইলের শাড়ি

শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য আর নিপুণ কারুশিল্পের সমন্বয়ে তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ি এবার ইউনেসকোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই স্বীকৃতির পর আন্তর্জাতিক এই মর্যাদা তাঁতপল্লীকে আবারও আলোচনায় নিয়ে এসেছে। নকশা, বুননশৈলী আর আরামের জন্য বহুদিন ধরেই টাঙ্গাইল শাড়ি নারীদের প্রথম পছন্দ। এই মনোনয়ন তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর কাছে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন তাঁতপল্লীতে একসময় উৎসবের আগে দিনরাত সমান তালে বেজে উঠত তাঁতের খটখট শব্দ। কারিগররা রঙিন সুতা রাঙিয়ে হাতে বুনতেন বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি। কিন্তু আধুনিক পোশাকের দাপট, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই ব্যস্ততা আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় ৮০ শতাংশ তাঁত ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, বাকি ২০ শতাংশ কোনোমতে টিকে আছে।

তাঁতিরা মনে করেন, ইউনেসকোর মনোনয়ন নিঃসন্দেহে বড় অর্জন, তবে এর সুফল পেতে হলে প্রয়োজন সরকারি নজরদারি ও সহায়তা। তাঁদের ভাষায়, “শিল্পটা টিকে রাখতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, না হলে ঐতিহ্য স্বীকৃতি পেলেও তাঁত পল্লীগুলো আর আগের জায়গায় ফিরবে না।” নারী শ্রমিকরাও এই শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেউ সুতা কাটেন, কেউ চরকা ঘোরান, আবার পুরুষ কারিগরদের সঙ্গে মিলে বুননেও সহযোগিতা করেন।

২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ি জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা পায়। তার আগেই ভারত এই শাড়ির ওপর জিআই দাবি তোলায় দেশে আলোচনার জন্ম হয়। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর সেটি শুধু শিল্পের মর্যাদাই বাড়ায়নি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টাঙ্গাইল শাড়িকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কারিগররা বলছেন, টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু উৎসব বা ঐতিহ্যের অংশ নয়, এটি শত শত পরিবারের জীবিকা। সস্তা, মেশিন বোনা শাড়ির প্রতিযোগিতা তাদের সমস্যায় ফেলছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর এই পেশায় আসতে চাইছে না। এর মধ্যেই ইউনেসকোর মনোনয়ন তাঁতপল্লীতে নতুন উদ্দীপনা এনে দিয়েছে। তাঁতিরা আশাবাদী, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাদের কারুশিল্পকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে