২০২৪ সালের ৬৮৭ সেট সরকারি বইয়ের হদিস নেই

পোস্টার লাগিয়ে কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগ ও বিচারের দাবি

এফএনএস (মোঃ হাবিবুর রহমান খান; কুমিল্লা) :
| আপডেট: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম | প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
পোস্টার লাগিয়ে কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগ ও বিচারের দাবি

‘কে এই নুসরাত? তার ক্ষমতার উৎস কোথায়? ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল আজ ধবংসের পথে! দেখার কি কেউ নেই’ কুমিল্লা নগরীর আনাচে কানাচে দেয়ালে দেয়াল  এমপি বাহার ও সুচি এবং নুসরাত জাহানের ছবি সম্বলিত রঙিন পোষ্টার লাগিয়ে  কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত জাহানের স্থায়ী পদত্যাগ ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ। এর আগে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাতকারী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষকরা স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে এমন প্রতিবাদের পোস্টার সোমবার কুমিল্লা নগরীর আশে পাশে লাগানো হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষকদের ফেসবুক আইডি পোস্টারগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

পোষ্টারে উল্লেখ্য করা হয়- ফ্যাসিস্ট এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচি ও প্রয়াত মেয়র রিফাতের সাথে ছিল যার সখ্যতা, ৫ই আগস্টের পরে একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। আওয়ামীলীগের ক্ষমতা থাকাকালীন কুমিল্লার অভিভাবক খ্যাত এমপি বাহারের ছত্র ছায়ায় সিনিয়র শিক্ষকদের পাত্তা না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে বর্তমানে হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। এর বিরুদ্ধে ৩৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। স্কুলের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয়, অনিয়ম ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অব্যবস্থাপনায় শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিনষ্টের জন্য কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত জাহানের স্থায়ী পদত্যাগ ও বিচার চাই। তার স্বামী মোজাম্মেল আলম একজন মাদকাসক্ত। মাদক দব্য নিয়ে র‍্যাবের হাতে আটকও হয়, পরে পলাতক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠতার কারণে প্রশাসন তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে জেলার অন্যতম সুনামধন্য বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত হলেও অভিযোগকারীদের দাবি, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কর্মকান্ডে এই সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, নুসরাত জাহান তার অনভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে বিদ্যালয়ে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কতিপয় খন্ডকালীন শিক্ষক, মোঃ আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ আবু তাহের ও মোসা, নাজমা আক্তারকে দিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে 'মব' বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখেন। সেই সঙ্গে আর্থিক অনিয়মেও জড়িয়ে পড়েন বলে দাবি অভিযোগকারীদের।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান মোট ১২ লক্ষ ২ হাজার ২৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এতে বিভিন্ন বরাদ্দ, রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষার খরচ ও জমা-বিনিয়োগের অসঙ্গতি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রাক-নির্বাচনী ও অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ ২২ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩২৬ টাকার মধ্যে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৭৬ টাকা পরীক্ষার সম্মানী হিসেবে বিতরণ করা হয় এবং অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের জন্য ব্যয় হয় ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু অবশিষ্ট ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৫০ টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ২০২৪ সালের ৬৮৭ সেট সরকারি বইয়ের হদিস নেই। এ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে হইচই পড়ে গিয়েছিল।

এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থের গরমিল পাওয়া গেছে বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন। ২০২৪ সালের ষষ্ঠ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে উত্তোলিত ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৪০ টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা হয় মাত্র ৮৩ হাজার ২৮ টাকা। অবশিষ্ট ৫১ হাজার ৬১২ টাকার কোনো হদিস নেই। একইভাবে অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ উত্তোলিত ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ১৬০ টাকার মধ্যে জমা হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২২ টাকা; যার বাকি ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৩৮ টাকার মধ্যে কম্পিউটার অপারেটরের নামে ধরা ২৬ হাজার ৫০০ টাকা বাদ দিলে বাকি টাকার উৎস বা ব্যবহার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। নবম শ্রেণির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা হয়েছে শুধু ৪ লক্ষ ৪১ হাজার ২৫২ টাকা।

২০২৫ সালে বিভিন্ন শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে আরও অসঙ্গতির কথা উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে। ষষ্ঠ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ উত্তোলিত ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা হয় ২ লক্ষ ২ হাজার ২১৫ টাকা। অবশিষ্ট টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা শ্রেণি শিক্ষক ও কম্পিউটার অপারেটরকে দেওয়া হলেও বাকি ২০ হাজার ৮৮৫ টাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই বছর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা হয় ৩ লক্ষ ৩ হাজার ৬ টাকা, আর শ্রেণি শিক্ষক ও অপারেটরকে দেওয়া ২০ হাজার টাকা বাদে বাকি ৫৩ হাজার ৪৯৪ টাকারও কোনো খোঁজ নেই।

এ বিষয়ে শিক্ষকরা বলেন- এ দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের অপসারণ না হলে ভবিষ্যৎতে মর্ডাণ স্কুলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্ন ঘটবে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও তারা জানান। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে