টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা কালিগঞ্জ ইউসিসিএ’র পরিদর্শক আব্দুস সালাম

এফএনএস (নিয়াজ কওছার তুহিন; কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা): | প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা কালিগঞ্জ ইউসিসিএ’র পরিদর্শক আব্দুস সালাম

কালিগঞ্জে বিআরডিবির আওতাধীন উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (ইউসিসিএ) লিমিটেডের বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন পরিদর্শক আব্দুস সালাম। এ ঘটনায় সর্বশান্ত হওয়া দুই শতাধিক দরিদ্র কৃষকের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। টাকা আত্মসাতকারী পরিদর্শক আব্দুস সালামকে নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তা এবং ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের উপর অনিয়মের দায়ভার চাপিয়ে তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সমবায় সমিতির ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও সদস্যরা। 

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে কালিগঞ্জ কেএসএস’র সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস, ইউসিসিএ’র  পরিচালক ফারুক হোসেন, কেএসএস’র পরিচালক সাইফুল ইসলাম, এবাদুল্যাহ শেখ, সাইফুল ইসলাম ও গাজী ইলিয়াস জানান, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার হিসেবে শেখ জাহাঙ্গীর আলম যোগদানের পর থেকে কালিগঞ্জ ইউসিসিএ ও বিআরডিবির বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচির পূর্বের অনিয়ম উদঘাটন করে সেগুলো সমাধানের জন্য সমবায়ীদের সাথে নিরলসভাবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন খেলাপী অবস্থায় থাকা সমবায় সমিতির সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পরিদর্শক আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সমিতির ম্যানেজার, সভাপতি ও সদস্যদের থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মেলে। প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ ও ব্যাংক চালান জালিয়াতি করে স্ত্রীর নামে আলীশান বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী চালান জালিয়াতি, কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য, প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দুর্নীতি, সমিতির অর্থ আত্মসাৎ ও হস্তমজুদের অভিযোগে গত ২৩-১০-২০২৫ তারিখে ৪৭.৬২.৮৭.৪৭.০০০.১৬.০০৮.১৩.৫৬১ নম্বর স্মারকের এক অফিস আদেশে ইউসিসিএ লিঃ এর কর্মচারীদের মডেল চাকরি প্রবিধানমালা-২০১৮ এর ২৬ (১) ধারা মোতাবেক পরিদর্শক আব্দুস সালামকে সাময়িক বহিস্কার করেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার শেখ জাহাঙ্গীর আলম।

কিন্তু একটি সুবিধাভোগী মহল এ বহিস্কার আদেশ পরিদর্শক আব্দুস সালামের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কৌশলে বিলম্ব করেন। ওই মহলটি উল্টো উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে কালিগঞ্জ থেকে বদলী করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে অন্যত্র বদলীর জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এর মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগকারীর স্বাক্ষর ছাড়াই একটি কাল্পনিক আবেদন করেন তারা। আবেদনপত্রে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এইচএম রহমাতুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শেখ এবাদুল ইসলাম, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রউফ, এনসিপির নেতা শেখ রাকিবের স্বাক্ষর ও সিলমোহর জালিয়াতি করে সুপারিশ দেখানো হয়। এর ফলে জাহাঙ্গীর আলমকে বদলীর আদেশ প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ। স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে দাখিলকৃত মিথ্যা অভিযোগের কারণে শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে বদলী করা হয়েছে জানতে পেরে বিভিন্ন সমবায় সমিতির সভাপতি, সদস্য, ইউসিসিএ’র পরিচালক ও কেএসএস এর পরিচালকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অবিলম্বে শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে কালিগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার হিসেবে পুনর্বহাল এবং অর্থ আত্মসাতকারী পরিদর্শক আব্দুস সালামকে আটকপূর্বক সমবায়ীদের অর্থ উদ্ধার ও এসবের নেপথ্যে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষহ প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য পরিদর্শক আব্দুস সালামের মুুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে