উড়োজাহাজ সঙ্কটে সংকুচিত হয়ে পড়ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক রুট। ইতিমধ্যে বিমানের ভাড়া নেয়া দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেও ভাড়া নেয়ার মতো উড়োজাহাজ মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বিমানের বহরে নতুন কোনো উড়োজাহাজ যুক্ত না হলে স্বাভাবিক ফ্লাইট পরিচালনা ও আগামী হজের সময় পরিস্থিতি কঠিন হবে। এমনিতেই বিমানের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নতুন উড়োজাহাজ ছাড়া বিমান স্বাভাবিক ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম হবে না। বিশেষ করে সংকট তীব্র হবে হজ মৌসুমে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স উড়োজাহাজ সংকটে ভুগছে। বিমানের বহরে গত পাঁচ বছরে নতুন একটি উড়োজাহাজও যুক্ত হয়নি। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক আন্তর্জাতিক রুট বন্ধ করা হয়েছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যে যাত্রী বিবেচনায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিমান ফ্লাইট বাড়াতে পারছে না। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য বিমানের কোনো কার্গো উড়োজাহাজ নেই। ফলে পণ্য পরিবহনে বিমানের একমাত্র ভরসা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের নিচের দিকে পণ্য বহনের স্থান বেলি কার্গো।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান বহরে আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৫টি উড়োজাহাজ প্রয়োজন। তা না হলে যাত্রীসেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে বিমানের উড়োজাহাজে চাহিদা অনুযায়ী দেশি যাত্রী মিললেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি যাত্রীদের অকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। বরং ৮০ শতাংশ বিদেশি যাত্রী অন্যান্য এয়ারলাইন্স বহন করছে। আর হজ মৌসুম শুরু হলেই ফ্লাইট সংকটে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক কোনো না কোনো রুট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে বিমান। তাতে সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি পবিত্র হজের সময় ঈদযাত্রা শুরু হয়। ওই সময় বিমানের বন্ধ রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করা জরুরি। তা না হলে আন্তর্জাতিক রুটে প্রতিযোগিতায় আরো পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ বিমান।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিমান এয়ারলাইন্সের সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ আসনের কমপক্ষে ১৫টি নতুন উড়োজাহাজ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বহরে ১৯টি নিজস্ব উড়োজাহাজ রয়েছে। আর লিজে নেয়া দুটির চুক্তির মেয়াদ গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া কার্গো উড়োজাহাজ না থাকায় যাত্রীবাহী বিমানে কিছু পণ্য পরিবহন করা হয়। কিন্তুবিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো একচেটিয়া পণ্য পরিবহন করে লাভবান হচ্ছে।
এদিকে এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম জানান, ১৫টি দেশের ২৩টি গন্তব্যে বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইট যায়। তার মধ্যে সৌদি আরবের ৪টি রুট হচ্ছে জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম ও মদিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩টি রুট দুবাই, সারজা ও আবুধাবি। ভারতের ৩টি রুট কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি। যুক্তরাজ্যের ২টি রুট লন্ডন ও ম্যানচেস্টার আর বাকি ১১টি গন্তব্য অন্যান্য দেশে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সাফিকুর রহমান জানান, চাহিদা অনুযায়ী বিমানের উড়োজাহাজ নেই। তবে চাইলেই এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব না। সংস্থার যে কোনো কিছু ক্রয় করতে রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন। আর উড়োজাহাজ কেনার জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার কমপক্ষে ৫-৬ বছর পর তা পাওয়া যায়।