সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০১ জনে। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২১ জন ডেঙ্গুরোগী, যা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত দৈনিক ডেঙ্গু-বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর বাইরে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে।
দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। অন্যজন বরিশাল বিভাগের সিটি করপোরেশনের বাইরে এলাকার। বিভিন্ন বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যাও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে। বরিশালে ৬৪ জন, চট্টগ্রামে ৬৩ জন, ঢাকার সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় ৭৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭৫ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ ছাড়া খুলনায় ৩০ জন, ময়মনসিংহে ৩১ জন, রাজশাহীতে ১২ জন এবং রংপুর বিভাগে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগীর হার ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নারী রোগীর হার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত এক দিনে সারা দেশে ৫২৮ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। ফলে চলতি বছরে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৭৬০ জনে। তবে এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং নগর অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গুর সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তাদের মতে, বাসাবাড়ি, নির্মাণস্থল এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতায় এডিস মশার প্রজনন সহজ হয়ে ওঠে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মন্তব্য, “ডেঙ্গু মোকাবিলায় নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, সচেতনতা এবং মশা দমনে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয়, দীর্ঘ মেয়াদে ডেঙ্গুর ঝুঁকি কমাতে নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের আরো সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।