নৌপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নৌযান চালক-শ্রমিকরা। এ চাঁদাবাজি মেঘনা থেকে পদ্মা, শীতলক্ষ্যা হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। মূলত নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান টার্গেট করেই চাঁদাবাজি চলছে। বর্তমানে নৌপথেও লাগামহীন চাঁদাবাজি চলছে। এই চাঁদাবাজিতে সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র সক্রিয়। তাদের চাহিদা মতো চাঁদা না দিলেই নৌযানের চালক-শ্রমিকদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। বিভিন্ন স্থানে নোঙর করা নৌযান থেকে রাতে এবং দিনের বেলায় চাঁদা আদায় করা হয়। তবে তার মধ্যে কিছু ঘটনায় মামলা হলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ ঘটনা। ফলে অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। ভুক্তভোগী শ্রমিক ও নৌপুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নৌপথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এককথায় চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণে নৌপথ। তাতে হাতে একপ্রকার জিম্মি নৌযান শ্রমিকরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। রাজধানীর সদরঘাটসহ চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও নারায়ণগঞ্জে নৌপথের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি চলছে। ওসব জেলার ওপর দিয়ে মেঘনা ও পদ্মা নদী প্রবাহিত। আর দুই নদী দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও চট্টগ্রামের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। তাছাড়া চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে দেড় হাজারের বেশি মালবাহী জাহাজ ও সহস্রাধিক বাল্কহেড। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় নৌযানে রাতে ও দিনে অব্যাহত চাঁদাবাজি চলছে।
সূত্র জানায়, চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল, চরভৈরবী, মল্লিকপুর, ইলিশা ও দড়রচর এলাকার সব ধরনের নৌযানকে চাঁদা দিতে হয়। শরীয়তপুরের চর আত্রা, ওয়াপদা, বাবুরচর, খাজুরতলা ও পাইনপাড়া এলাকায় ট্রলার নিয়ে দুর্বৃত্তরা চাঁদাবাজি করে। দুর্বৃত্তরা ট্রলার ও স্পিডবোটে করে এসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। চাহিদামতো চাঁদা না দিলে নৌযানের চালক ও শ্রমিকদের মারধর করা হয়। ওসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না। তাছাড়া নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদীপথে প্রকাশ্যে মালবাহী নৌযানে চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদাবাজদের কবল থেকে মালবাহী জাহাজসহ ছোট ট্রলারও রক্ষা পাচ্ছে না। প্রতিটি নৌযান থেকে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌযানের শ্রমিক ও চালকদের মারধর এবং মালপত্র লুট করে নেয়া হয়। শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন সার কারখানা, সুগার মিল, জুটমিল, পেপার মিল, সিমেন্টসহ বড় বড় শিল্প-কারখানার বেশির ভাগ পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেয়া করা হয়। কিন্তু চাহিদামতো চাঁদা না পেলেই চাঁদাবাজরা হামলা ও লুটপাট চালায়। তাছাড়া নৌপথ দিয়ে চলাচল করা বালু, বাঁশ, পাথরসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার আটকে চাঁদা আদায় করা হয়।
এদিকে নৌপুলিশ কিছু এলাকা থেকে চাঁদাবাজচক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাছাড়া গত ১১ আগস্ট সিলেটের গোয়াইনঘাটে নৌপথে চাঁদাবাজি মামলায় র্যাব-৯ সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী আজমল হোসেনসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী আজমল আজমল নৌপথে একটি গ্রুপের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো। তার আগে গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি লাইটার জাহাজ চাঁদপুর মোহনাসংলগ্ন এলাকায় নোঙর করলে সাত সদস্যের একটি চাঁদাবাজদল সেখানে চাঁদা দাবি করে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে নৌপুলিশের (ঢাকা অঞ্চল) পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নৌপথে সক্রিয় অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আর জড়িতদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।