বরিশালের চরের জমির ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
বরিশালের চরের জমির ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা

বরিশালের নদীঘেরা হিজলা উপজেলার ভূমিহীনদের মাঝে সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া কয়েকশ’ একর জমির ধান জোরপূর্বক কেটে লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে পাশ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার চিহ্নিত প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে।

খবর পেয়ে হিজলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ধান ফেলেই পালিয়ে গেছে ওইসব ভূমিদস্যুরা। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে-হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের কোলচরী পাতারচর মৌজায় স্থানীয় ভূমিহীনদের মাঝে সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন ওইসব ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা। রোপিত ধান পাকার পর গত কয়েকদিন থেকে জোরপূর্বক সেই ধান কেটে নিয়েছে পাশ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু জসিম মোতাইত ও দুলাল মোতাইতের নেতৃত্বে তাদের অর্ধশতাধিক সহযোগিরা। খবর পেয়ে বন্দোবস্ত পাওয়া ওইসব ভূমিহীনরা থানা পুলিশের দারস্ত হন। পরবর্তীতে হিজলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে কাটা ধান ফেলেই পালিয়ে যায় ভূমিদুস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ২০১২-১৩ সালে ৫১ জন ভূমিহীনদের মাঝে ১১০ একর চরের জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। ভূমিহীন কৃষক মো. ইয়াসিন বলেন, এসব জমি সরকারের পক্ষ থেকে বৈধভাবে আমাদেরকে বন্দবস্তো দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে ধান চাষ করে আসছি। তিনি আরও বলেন-বর্তমানে আমাদের জমিতে রোপনকৃত পাকা আমন ধান রয়েছে। অভিযোগ করে তিনি (ইয়াসিন) বলেন-গত ৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে গত দুইদিন পর্যন্ত পাশ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু জসিম মোতাইত ও দুলাল মোতাইতের নেতৃত্বে তাদের অর্ধশতাধিক সহযোগিরা কয়েকটি ট্রলারযোগে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে লুট করার জন্য পাকা ধান কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে তারা ১০ ডিসেম্বর দুপুরে থানা পুলিশের দারস্ত হন।

স্থানীয় ভূমিহীন আবুল কাশেম মাতুব্বরসহ অন্যান্যরা বলেন, সরকারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত পাওয়া পর আমরা ধান রোপন করেছি। কিন্তু সেই ধান পাকার পর পাশ্ববর্তী জেলার বাসিন্দা চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক আমাদের রোপন করা ধান কেটে লুটপাট করে কিছু ধান নিয়ে গেছে। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল ইসলাম আকন বলেন, সরকার গরীব অসহায় ভূমিহীনদের মাঝে চরের জমি বন্দবস্তো দেওয়ার পর তারা ওই জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া সেই জমির ধান ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যায়।

ধান কেটে নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের সাওরা সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) শহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পাশ্ববর্তী জেলা থেকে আসা লোকজনে কাটা ধান ফেলে ট্রলারযোগে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সদ্য যোগদানকারী হিজলা উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভূমি) অভ্র জ্যোতি পোদ্দার বলেন, বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ধান লুটের অভিযোগের বিষয়ে শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট এলাকার বাসিন্দা জসিম মোতাইত ও দুলাল মোতাইতের সাথে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনধরনের বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।