কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এ বছর অসময়ে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সরিষা চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা এ উপজেলার কৃষকদের অন্যতম প্রধান আবাদ হলেও চলিত মৌসুমে পূর্বের বছরের তুলানায় কমেছ মোট আবাদি জমির পরিমাণ।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৪০ হেক্টর কম জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবেই কৃষকদের আর্থিক সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে যেসব কৃষক নিয়মিত সরিষার ফুল বিক্রি করে বড় অঙ্কের আয় করতেন, তারা এবার ক্ষতির হিসাবই কষছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২৮ হেক্টর; তবে বাস্তবে আবাদ হয়েছে মাত্র ২১০ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টির কারণে দীর্ঘদিন জমিতে পানি জমে থাকায় মাটিতে ‘জো’ তৈরি না হওয়ায় সময়মতো বীজ বপন সম্ভব হয়নি। এতে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা, শাকসবজি এবং কিছু এলাকায় ধানের চাষেও ঝুঁকে পড়েন।
সরেজমিনে জিনারী ইউনিয়নের চরকাটি হারী গ্রাম, সাহেবের চর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ জমিতেই এ বছর সরিষার চাষ করা হয়নি।
চরকাটি হারী গ্রামের কৃষক আবুল বাশার, সাহেবের চর গ্রামের বাচ্চু মিয়া, আলামিনসহ অনেকেই জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে জমি প্রস্তুত করতে না পারায় সরিষা বপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবুল বাশার বলেন, সরিষা আমাদের প্রধান আয়ের ফসল। খরচ কম, লাভ বেশি। কিন্তু এ বছর একেবারেই চাষ করতে পারিনি।
গত কয়েক বছরে সরিষার পাশাপাশি সরিষার ফুল বিক্রি করেও এলাকায় কৃষকেরা ভালো আয় করেছেন। কৃষকদের দাবি, একেকজন কৃষক শুধুমাত্র ফুল বিক্রিতেই অর্ধলক্ষাধিক টাকা লাভ করেছেন। ফলে এ বছর সরিষা না হওয়ায় তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চর জামাইল গ্রামের কৃষক নবী হোসেন ও নুরুল হুদা জানান, এ বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু কেবল ফুল বিক্রিতেই তারা লাভ করেছেন ১২ হাজার টাকা। তাদের ভাষায়, সরিষার তুলনায় অন্যান্য ফসলের খরচ বেশি। তাই সরিষা কম হলে লাভও কমে যায়।
অন্যদিকে চরহাজীপুর গ্রামের কৃষক রতন মিয়া বলেন,আমাদের জমি কিছুটা উঁচু হওয়ায় আমরা সময়মতো সরিষা বপন করতে পেরেছি। কিন্তু নিচু জমির কৃষকরা বৃষ্টির কারণে সরিষা করতে পারেননি। তারা বাধ্য হয়ে ভুট্টা ও ধানের দিকে ঝুঁকেছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলিমুন শাহান বলেন, এ বছর সরিষা চাষ কম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অসময়ে বৃষ্টি। বীজ বপনের উপযোগী ‘জো’ মাটিতে পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা কৃষকদের বিকল্প ফসলের পরামর্শ দিয়েছি। অনেকেই ভুট্টা, মরিচ, শাকসবজি আবাদ করে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। আগামী মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষা আবাদ আবারো বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একে এম শাজাহান কবির বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় সরিষা বপনের সময় মাটিতে জো ছিল না। এ কারণে এবছর সরিষা আবাদ কমেছে। তবে ভুট্টা ও সবজি চাষ বেড়েছে। যেসব জমিতে সরিষা আবাদ বন্ধ ছিল, সেগুলোতে পানি নেমে যাওয়ার পরে কৃষকেরা বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা ও বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছেন।