কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে শুকনো মৌসুমেও থেমে নেই নদী ভাঙন। দুধকুমার, গঙ্গাধর, ব্রহ্মপুত্র নদীর বিভিনন্ন পয়েন্টে ভাঙন তিব্র হয়েছে। এর সাথে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গেলো বন্যা শেষে নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে গঙ্গাধর নদীর পূর্বতীর ভারত সীমান্তবর্তী কচাকাটা ইউনিয়নের ধনিরামপুর, দুধকুমার নদীর রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম ও কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি এলাকা। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে বসতভিটা, আবাদি জমি, গাছপালাসহ নানা স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে শতাধিক বসত বাড়ি, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার, বিদ্যুতের সাবমেরিন ক্যাবল পয়েন্ট। ভাঙনে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে কেউ সড়কে আবার কেউ অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তরীরহাট এলাকার ফারুক হোসেন জানান কিছুদিন আগের বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র হয়েছে গঙ্গাধর নদীর ভাঙ্গন। তরীরহাট এলাকায় ভাঙনের কবলে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজার, বিদ্যুতের সাবমেরিন কেবল ও বৈদ্যুতিক খুটিসহ নানা স্থাপনা। কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন মন্ডল জানান দীর্ঘ দিনের অন্ধকার ঘুঁচতে তরীরহাট এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালণের লাইন আসলেও তা এখন নদীগর্ভে বিলিনের পথে। আর এই সাবমেরিন ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অন্ধকারে থাকবে ওই এলাকার শতশত পরিবার। ব্যহত হবে সন্তানদের পড়ালেখা। তিনি আরও জানান এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষি। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লে কৃষিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এমনকী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অপরদিকে ভাঙনের কবলে পড়েছে দুধকুমার নদী তীরবর্তী রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম ও চর দামাল গ্রামের ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নদী তীরবর্তী মানুষ। ওই এলাকার এবাদ আলী (৫৫) জানান তিনি এর আগে ৩ বার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এখন তার সব জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন। আবারও ভাঙনের মুখে রয়েছে তার বসতভিটা। এবার বাড়ি ভেঙে গেলে কোথায় যাবেন এমন মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না তার। আজিবর রহমান (৫৮) জানান তার সুপারি বাগান ও বসত ভিটাসহ ১২ বিঘা জমি ছিলো। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। সাইফুর রহমান (৫৫), জয়নাল মিয়া (৪৫) ও জোমের আলী (৬০) জানান গেলো ২ মাসে দামালগ্রাম এলাকায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা বিলিন হয়েছে দুধকুমার নদী ভাঙনে। পাশে চর দামালগ্রাম মসজিদ ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া বড়বাড়ী বাজারসহ বহু বসতভিটা ভাঙনের মুখে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে নদীপাড়ের মানুষের।
রায়গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান দীপ মন্ডল জানান, দুধকুমার নদের ভাঙনে তার ইউনিয়েনের ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বহু মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। এমনকী নদী ভাঙন রোধে মানববন্ধন করেও কোনো লাভ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়া এসব এলাকা তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রায়গঞ্জ ও কচাকাটার তরিরহাটএলাকায় নদী ভাঙনের বিষয়ে জেনেছি। বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।