হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

সিইসির মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে: সাদিক কায়েম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
সিইসির মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে: সাদিক কায়েম

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য প্রত্যাহার এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য হামলার গুরুত্ব খাটো করে দেখানোর শামিল এবং এটি দায়িত্বশীল আচরণ নয়।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সাদিক কায়েম। এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পাশেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন।

সাদিক কায়েম বলেন, পুরো ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। তিনি দ্রুত বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন বলে প্রত্যাশা করি। তার ভাষায়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফলন।

ব্রিফিংয়ে তিনি হাদির ওপর গুলির ঘটনার প্রতিবাদে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি দ্রুত কার্যকর না হলে সারাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র জনতাকে সঙ্গে নিয়ে জুলাইয়ের চেয়েও শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন সাদিক কায়েম।

প্রথম দাবিতে তিনি বলেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারী সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রের সব সংশ্লিষ্ট অর্গানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং যাদের গাফিলতি প্রমাণিত হবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যারা এই হামলাকে সমর্থন জুগিয়েছে এবং জুলাই বিপ্লবীদের হত্যাযোগ্য করে তুলেছে, সেই গোষ্ঠীগুলোকে সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বানও জানান তিনি।

দ্বিতীয় দাবিতে সাদিক কায়েম বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান তিনি। এ বিষয়ে অবহেলা আর সহ্য করা হবে না বলেও সতর্ক করেন।

শেষ দাবিতে তিনি বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ও অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে গণহত্যাকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি। অভিযুক্তদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন।

এদিকে এর আগে রাজধানীর গুলশানে ‘ইয়ুথ ভোটার’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএসএম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সময় দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে এবং হাদির ওপর হামলাকেও তিনি সেই প্রেক্ষাপটেই দেখেছেন। তার এই বক্তব্য ঘিরেই নতুন করে রাজনৈতিক ও ছাত্র মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে আসা দুই আততায়ী চলন্ত রিকশায় থাকা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে