গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব নেবে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার অকাল মৃত্যুকে রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। তিনি জানান, হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। এদিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের সব মসজিদে ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামে শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন এক অকুতোভয় সৈনিক। দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে তার প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি।” তিনি শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, সন্তান, পরিবার পরিজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এই ঘটনাকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না বলেও তিনি দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান।
শরিফ ওসমান হাদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের মাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে নির্বাচনী প্রচারণার সময় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই শোকের সময়ে সবাইকে ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখতে হবে, গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে হবে।