দেশের ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমার সময় তৃতীয় দফায় ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার জটিলতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত সংখ্যক রিটার্ন জমা পড়েনি। ফলে এনবিআর তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে, এনবিআর প্রথমে ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং পরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রস্তাবটি অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয় এবং অনুমোদন পাওয়ার পর এটি কার্যকর করা হয়। এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে সরকার ইতিবাচক অবস্থানে ছিল, তাই দ্রুত অনুমোদন মিলেছে।"
২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৭টি, যার মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫২টি। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৯ কোটি টাকা। তবে ২০২৩-২৪ করবর্ষে মোট ৪০ লাখের বেশি রিটার্ন জমা পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আয়কর আইন অনুযায়ী, বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি আয় হলে করদাতাকে রিটার্ন জমা দিতে হয়। এছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এনবিআরের বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সরকারি কর্মচারী, দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মোবাইল টেলিকম প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নির্দিষ্ট কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদের জন্য আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের জন্য সময়সীমা বাড়ানো হলেও কোম্পানির ক্ষেত্রে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
করদাতারা সময়মতো রিটার্ন জমা দিলে তারা বিভিন্ন সুবিধা পাবেন, যেমন:
- ব্যাংকে সঞ্চয়ে সুদ বা মুনাফার ওপর কর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।
- পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কম হারে কর পরিশোধ করতে হবে।
সরকারের ধারাবাহিক সময় বৃদ্ধির ফলে করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সহজতর হয়েছে। তবে এনবিআর আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করদাতারা তাদের রিটার্ন জমা দিয়ে কর আদায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন।