বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আন্তঃব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) পরিচালনার জন্য ‘বিনিময়’ নামে যে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি।
গভর্নর মনসুরের মতে, আন্তঃব্যাংক এমএফএসের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া। তিনি বলেন, “এটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হতো, তাহলে আন্তঃব্যাংক লেনদেন আরও সহজ হতো এবং আর্থিক খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসত।”
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর বলেন, “আমাদের কর ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অনলাইন প্রয়োজন। ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন না হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি বন্ধ হবে না।”
তিনি আরও জানান, কয়েক বছর আগে তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরই থেকে ট্যাক্স ফাইল জমা দেওয়ার সময় তার এক কর্মকর্তার কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। তিনি তা না দেওয়ায় পরবর্তীতে ওই কর্মকর্তার ওপর ৫ কোটি টাকার কর বসিয়ে দেওয়া হয়।
গভর্নর মনসুর বলেন, “বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রাখলে তিন হাজার টাকা করে কেন কেটে রাখা হয়? এটি জনগণকে ব্যাংকে আমানত রাখা থেকে নিরুৎসাহিত করছে। আমাদের ব্যাংকিং খাতে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত আমানত প্রবৃদ্ধি হওয়া উচিত, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।”
গভর্নর মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে। তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলোতেও এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পর সুফল পেতে ১০ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। আশা করা যায়, আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশেও ভালো ফলাফল দেখা যাবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীরা করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধির অনুরোধ জানান। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আগামী বাজেটে বড় পরিবর্তন আসতে পারে, তবে এজন্য ব্যবসায়ীদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।”
গভর্নর মনে করেন, রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। “বর্তমান সরকার হয়তো সম্পূর্ণ সংস্কার করতে পারবে না, তবে শুরুটা করতে পারবে,” বলেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, গভর্নরের এই মন্তব্য আর্থিক খাতের নীতিমালা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।