বিপিএলের শিরোপা উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ইচ্ছে থাকা সত্বেও শুধুমাত্র নিরাপত্তার অভাবে বরিশালবাসীর সাথে বেশি সময় কাটাতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন টানা দুইবারের বিপিএল শিরোপাজয়ী ফরচুন বরিশাল টিমের ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক ভিডিও বার্তায় তামিম ইকবাল দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, আমরা ৯ ফেব্রুয়ারি বরিশালে আসবো বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের অনেক প্ল্যান ছিল। যে কারণে পুরো টিম নিয়ে বরিশালে এসেছিলাম। আপনাদের সবার সাথে দেখা হবে, প্রত্যেকটি খেলোয়াড় কিছু না কিছু বলবে আর আপনাদের সবার সাথে টাইম স্পেন্ড করবে। আনফরচুনেটলি ওখানের স্টেজে খুবই খুবই কম সময় আমরা থাকতে পেরেছি। কারণ, আমাকে এটা বলতে হচ্ছে যে, আমার লাইফে এতো মানুষ একসাথে আমি দেখিনি। আমার মনে হয় কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ছিলেন আমাদের দেখার জন্য। তিনি আরও বলেন, একটা সময় এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমাদের সিকিউরিটি টিম পরিবেশটা নিরাপদ মনে করছিল না। আপনারা যদি লক্ষ্য করে থাকেন, যখন আমরা বাস নিয়ে বেলস পার্কের অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকছিলাম, তখন আমাদের বাসের ওপরে পর্যন্ত মানুষ উঠে যাচ্ছিল। আমাদের সিকিউরিটি টিম থেকে কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, পরিবেশটি নিরাপদ না। আরও কারণ, স্টেজে যখন আমরা উঠি তখন ওখানে অনেক মানুষ ছিল আর অনেকে স্টেজে উঠে যাচ্ছিলেন। এজন্য প্লেয়ারদের সেফটির কথা চিন্তা করে একটা সময় আমাদেরকে বলা হয় আমরা যেন (না নেমে) বাস ঘুরিয়ে ফিরে যাই। তবে এতো মানুষ! আপনারা এতো কষ্ট করে ওখানে এসেছিলেন, তাই আমরা এ কাজটা করতে পারলাম না। ফরচুন বরিশালের ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল বলেন, তারপরেও আমরা যেভাবেই হোক বাস থেকে নেমেছি। সবাই আপনাদের সাথে হাই-হ্যালো করেছে, ট্রফিও আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনাদেরকে বেশি সময় দিতে পারিনি বা আপনাদের সাথে কথা বলতে পারিনি। আমি আশাবাদী যে, আপনারা আমাদের এই অপারগতা বুঝবেন। আমি স্বীকার করি যে, ৯ ফেব্রুয়ারি আপনারা হতাশ হয়েছেন। কারণ, আপনারা এতো মানুষ এসে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে আমাদেরকে খুবই অল্প সময়ের জন্য দেখতে পেরেছেন। তবে আশা করি আপনারা আমাদের কথাটাও একটু ভাববেন। একটা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ছিল। যদি ওখানে কোনো খেলোয়াড় পড়ে যেতো বা ব্যথা পেতো তখন বিষয়টা খুব বাজে হতো। তামিম ইকবাল আরও বলেন, যে কথাটা স্টেজে উঠে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি, সেই কথা আপনাদের ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বলছি, দেশ-বিদেশে অনেক দলে খেলেছি কিন্তু আমি ফরচুন বরিশালের মতো ফ্যান কোথাও দেখিনি। আর ৯ ফেব্রুয়ারি আপনারা বরিশাল বেলস পার্ক মাঠে আমাদের যা দেখিয়েছেন, তা দেখে ফরচুন বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান ভাইকে বলেছি, এই টিমের প্রতি আমাদের দায়িত্বটা আরো তিনগুণ বেড়ে গেল। কারণ বরিশালের লাখ লাখ ফ্যান আমাদের সাথে আছে। আমরা চাই, আপনারা এভাবেই আমাদের সাপোর্ট করবেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, পরবর্তী সময়ে আমরা যখন আসবো আশা করি তখন আমাদের অ্যারেজমেন্টটা আরো ভালো থাকবে, নিরাপত্তাটা আরো জোরদার থাকবে। যেন আপনারাও সুন্দরভাবে আমাদেরকে দেখতে পারেন, আমাদের সাথে এনজয় করতে পারেন। আর আমরাও যেন আপনাদের সাথে কথা বলতে পারি।
ট্রফি প্রদর্শনীস্থলে হট্টগোল সাংবাদিকের জিডি \ নগরীর বেলর্স পার্কে অনুষ্ঠিত বিপিএল চ্যাম্পিয়ন দল ফরচুন বরিশালের ট্রফি প্রদর্শনীর শেষভাগে কতিপয় উশৃংখল যুবকের বিশৃঙ্খলার মাঝে পরে বরিশালে কর্মরত ১০ জন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসময় টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ভাঙচুর ও খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি টিভি ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বরিশাল প্রতিনিধি নিকুঞ্জ বালা পলাশ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে নিকুঞ্জ বালা পলাশ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বলেন, চাঁপাচাপির মধ্য থেকে কোনভাবে নিজের জীবন রক্ষা করে যে বের হয়ে আসতে পেরেছি সেটাই সৌভাগ্য। তবে ওইসময় টেলিভিশনের একটি মাইক্রোফোন, নিজের ব্যবহৃত একটি আইফোন, মানিব্যাগ, মানিব্যাগে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড, সোনালী ব্যাংকের স্বাক্ষরবিহীন চেক, দুই ব্যাংকের দুটি ডেবিট কার্ড ও নগদ সাড়ে ছয়হাজার টাকা খোয়া যায়। এতো বড় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিষয়টি চরম দুর্বল ছিলো জানিয়ে আহত অপর এক সাংবাদিক চ্যানেল ২৪ এর কাওছার হোসেন রানা বলেন, দর্শকদের ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পরে যাওয়ার পর শরীরের ওপর দিয়ে অনেকে চলে গেছে। কোনভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তবে আমার সাথে থাকা ক্যামেরাপার্সন খুব আহত হয়েছে। সেইসাথে ট্রাইপড ও মোবাইল ভেঙ্গেছে। মাই টিভির বরিশাল প্রতিনিধি পারভেজ রাসেল বলেন, আমরা কটলেস বুম ছিনতাই হয়েছে ও ট্রাইপট ভেঙে গেছে। মানুষের পায়ের নিচ থেকে এক শিশু দর্শককে বাঁচাতে গিয়ে আমি বেধম মারধরের শিকার হয়েছি। এখন টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ট্রাইপট ভেঙে গেছে। আমি ও রিপোর্টার অমিত হাসান কোনমতে নিজেদের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। জানিনা হয়তো আর একটুু হলে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো। দেশ টিভির চিত্র সাংবাদিক শাহীন সুমন বলেন, যে কান্ড ঘটেছে তাতে কোনমতে জীবন নিয়ে ফিরেছি। মৃত্যু কতোটা কাছে তা নিজ চোখে দেখে এসেছি। যমুনা টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান কাওছার হোসেন বলেন, আমার ট্রাইপড ও ক্যামেরা সেইভ করতে গিয়ে আমি পরে যাই। একটুর জন্য গুরুত্বর আহত হইনি। ফরচুন বরিশাল টিমের স্বত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেছেন, জাতীয় টিম ও বিদেশী খেলোয়ারসহ ২২ জন এবং টিম ম্যানেজার, কোচসহ মোট ৪০ জনের একটি দল বরিশালে এসেছিলেন। বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ সেনা বাহিনী ও পুলিশের অসংখ্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এতো মানুষের ভিড়ে খেলোয়াড়রা মঞ্চ ত্যাগ করার পর সেখানে কি হয়েছে তাৎক্ষনিক তা দেখা হয়নি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে দর্শক বেশি হয়েছে এবং দর্শকদের উৎসাহে আমাদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে বেগ পেতে হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরেও কিছু ঘটনা ঘটতে পারে।