ভোলার লালমোহনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী তীরে বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা প্রকাশ্যে ধরা হচ্ছে। আর এসব পোনা সিন্ডিকেট করে রাতের আঁধারে বিক্র করা হচ্ছে খুলনার পাইকারদের কাছে। উপজেলার গজারিয়া খাল গোড়া ঘাট দিয়ে নিয়মিত বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়া হয় তেঁতুলিয়া নদীর ওপাড়ে। সেখান থেকে বরিশালের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে খুলনা নেওয়া হয়। লালমোহন গজারিয়া এলাকার মামুন ও মতিনের নেতৃত্বে এই বাগনা রেনু পোনা পাচার হলেও প্রশাসন ও মৎস্য অফিস কোন ভূমিকা নিচ্ছে না।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ঘাটে ঘাটে সিন্ডিকেট। লালমোহন গজারিয়া খালগোড়া দিয়ে নিয়মিত রাতের আঁধারে ট্রলারে করে রেনু পোনা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পোনা পাচারে পথে পথে রয়েছে দালাল চক্র। লালমোহন, চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সমন্বয়ে এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের নসু মিয়া। নসু মিয়াই নিয়মিত বোরহানউদ্দিনের শিপন মাঝির ট্রলারে চুক্তি করে গজারিয়া খালগোড়া দিয়ে এই বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা পাচার করে আসছে। লালমোহনের গজারিয়ায় এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে বর্তমানের মামুন ও মতিন নামে দুই যুব নেতা। যারা সব কিছু ম্যানেজ করে নিরাপদে ট্রলার ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অবৈধ বিহুন্দী জাল দিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে পাড়ে ধরা হয় বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা। এর ফলে অন্য প্রজাতির মাছের পোনা ও জলজ প্রাণি ধ্বংস হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চরফ্যাশনের বেতুয়াসহ কয়েকটি ঘাট থেকে ও লালমোহন লর্ডহার্ডিঞ্জ, মঙ্গলসিকদার থেকে রেনু পোনা প্লাস্টিকের ব্যারেল (ড্রামে) ভর্তি করে পিকআপ ভ্যানে নিয়ে আসা হয়। ওসমানগঞ্জ হয়ে গজারিয়া শিমুলতলি দিয়ে গজারিয়া খালগোড়া ঘাটে পৌছে ওই পিকআপ ভ্যান। রাত গভীর হলেই সেখানে বোরহানউদ্দিন উপজেলার নসুর মিয়ার পাঠানো ট্রলার ব্যারেলগুলো বহন করে নিয়ে যায় সুবিধামতো দশমিনা বা কালাইয়ার উদ্দেশ্যে। জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে রেনু পোনা লালমোহন বদরপুর ইউনিয়নের ৩টি স্পট দিয়ে পাচার হতো। তখনকার ক্ষমতাসীনরা এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত বছরের ২৭ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে ইউনিয়নের দেবীরচর বেড়ির উপর একটি ঘর থেকে অবৈধভাবে পাচার করার উদ্দেশ্যে মজুদ করা ২২ টি ড্রাম, বালতিতে রাখা ৫০ লক্ষ গলদা/বাগদা রেনু পোনা জব্দ করা হয়। এই অভিযান পরিচালনা করেন লালমোহনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এহসানুল হক শিপন। এসময় ২জনকে আটক করে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। কিন্তু এরপরও থেমে নেই এই পোনা পাচার। ওই সময়ও এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন নসু মিয়া। বর্তমানে পালা বদলের পর তিনি ব্যবসা থামাননি। তার নিয়ন্ত্রণের লোক পরিবর্তন করে তিনি নিয়মিত এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন রেনু পোনা পাচার। গত জানুয়ারি মাস থেকে এর স্পট নির্ধারণ করেছে গজারিয়া খালগোড়া ঘাট। লালমোহনের এই ঘাট নিরাপদ জোন নিশ্চিত করে জানুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত পাচার হচ্ছে রেনু পোনা।
এ ব্যাপারে নসু মিয়ার কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি গজারিয়ার দুই ব্যক্তির নাম বলে এড়িয়ে যান। লালমোহন উপজেলা মৎস্য অফিসার আলী আহমেদ আখন্দ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রেনু পোনা পাচারের সুনির্দিস্ট তথ্য পেলে অভিযান চালানো হবে।