আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত শুরু করেছে আন্দোলনকারীরা। এসময় যোগ দিতে দেখা যায়, ইসলামী ছাত্রশিবির, প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ (আপ বাংলাদেশ) বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শনিবার বেলা ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে গণজমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দেন জনতা।
জানা গেছে, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ মোড়ের বিজ্ঞাপন বোর্ডের নিচে সিঁড়ির ওপর অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। তারা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে সড়কের ওপর বসে পড়তে আহ্বান জানান।
এসময় উপস্থিত জনতা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরমধ্যে রয়েছে, 'লীগ ধর, জেলে ভর', 'ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ', 'দফা এক দাবি এক, লীগ নট কাম ব্যাক', 'এক দুই তিন চার, চুপ্পু তুই গদি ছাড়', 'আওয়ামী লীগের নিবন্ধন, বাতিল কর করতে হবে', 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা' প্রভৃতি।
শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে সিংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও লেবার পার্টি। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তরুণ আলেম রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, আমাদের ২০২৫ সালের মে’তে আবার রাজপথে নামতে হতো না যদি স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পরই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হতো। হাসিনার পতন না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টাকে ফাঁসি মঞ্চে উঠতে হতো। বাকিদের কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হতো না। খুনি হাসিনা ও তার দল বিগত বছরগুলোতে ও জুলাইয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতা সকাল থেকেই শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। তবে গতকালের মতো ব্যাপক লোক সমাগম নেই। শাহবাগ মোড়ের চারদিকের সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়ে মধ্যবর্তী স্থানে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। স্লোগানে শুনা যায়, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ ব্যান’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে দরে জেলে ভর’, ‘আমার সোনার বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নেই’, ‘বিচার কর করতে হবে, আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’ সহ বিভিন্ন কথা।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর আহ্বানে গত বৃহস্পতিবার রাত ভর ও পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে এনসিপি ছাড়াও বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে যোগ দেন।
পরেরদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মিন্টো রোডের মোড়ে ফোয়ারার সামনে তৈরি মঞ্চে অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করা হয়।
বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে হাসনাত আবদুল্লাহ ওই মঞ্চ থেকে 'শাহবাগ ব্লকেডের' ঘোষণা দেন। এরপর মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করা হয়। গতকাল রাত ১১টার দিকে শাহবাগের অবরোধ কর্মসূচিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা- এই তিন দফা দাবিতে শাহবাগে তাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।