নাফিজ সরাফত পরিবারের ১৯টি ফ্ল্যাট ও ৮৫ শতাংশ জমি জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২০ মে, ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
নাফিজ সরাফত পরিবারের ১৯টি ফ্ল্যাট ও ৮৫ শতাংশ জমি জব্দ

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ এবং ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফতের নামে থাকা বিপুল স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ আসে, যা আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত অনিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক।

রোববার (২০ মে) ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত থেকে এই আদেশ আসে। অনুসন্ধান চালিয়ে আদালতে জব্দের আবেদন জানান দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান।

দুদক জানায়, নাফিজ সরাফত এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে নেমে কমিশনের অনুসন্ধান দল দেশে ও বিদেশে বিপুল সম্পদের সন্ধান পায়। এসব সম্পদ অর্জনের পেছনে বৈধ উৎসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তারা পলাতক।

আদালতের নির্দেশে জব্দ হওয়া সম্পদের তালিকায় রয়েছে:

ফ্ল্যাট: গুলশান, বনানী, বারিধারা, ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর, ভাটারা, নিকুঞ্জ, পান্তপথসহ ঢাকার অভিজাত এলাকায় নাফিজ সরাফত, তার স্ত্রী ও পুত্রের নামে মোট ১৯টি ফ্ল্যাট।

বাড়ি: গুলশান-২ তে একটি বিশাল ২০ তলা ভবন, নিকুঞ্জে আরেকটি বাড়ি।

প্লট: পূর্বাচল, নিকুঞ্জ ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৪টি প্লট।

জমি: গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মোট ৮৫ দশমিক ২৯ শতাংশ জমি (চালা ও নাল জমি)।

বিদেশি সম্পদ: দুবাইয়ে একটি ফ্ল্যাট ও একটি ভিলা।

তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের সময় নাফিজ সরাফতের নাম বিভিন্ন অনিয়মে বারবার এলেও তিনি ছিলেন আইনের আওতার বাইরে। এমনকি একসময় সাংবাদিকদের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে নিয়ে কাজ করলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হত বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসন গঠনের পরপরই দুদকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান — বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) — নাফিজ সরাফতের সম্পদের অনুসন্ধানে নামে।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এরপর ৭ জানুয়ারি তার দেশের সম্পত্তি, ২২ জানুয়ারি দুবাইয়ের সম্পত্তি এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ৭৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ আসে। তার বিরুদ্ধে ৫২টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্যও পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

দুদক জানায়, অনুসন্ধান শুরুর পর অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ব্যক্তি ও তার পরিবার চেষ্টা করছিলেন এসব সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তরের। ফলে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে এসব সম্পদ জব্দ প্রয়োজন ছিল।

দুদকের তদন্তকারী দল এখন এসব সম্পত্তির প্রকৃত উৎস এবং অর্থপাচারের পথ চিহ্নিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আদালতের এই আদেশ দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এক বড় অগ্রগতি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে