ক্ষুদ্ধ ইউএনও-ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

সরাইলে বিদ্যুৎহীনতায় ৩৮৮ পরীক্ষার্থীর দূর্ভোগ

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম
সরাইলে বিদ্যুৎহীনতায় ৩৮৮ পরীক্ষার্থীর দূর্ভোগ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রচন্ড তাপদাহে বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই বিদ্যুৎহীনতায় ৩৮৮ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ বিদ্যুৎহীনতায় ঘাম মুছতে অনেক সময় ব্যয় গেছে। আর শরীরের জ্বালা পোড়ায় অনেক জানা বিষয়ও ভুলে গেছি। স্থানীয় পিডিবি’র খাম খেয়ালির শিকার হয়েছি আমরা। ইউএনও ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (অধ্যক্ষ) অভিযোগ পরীক্ষা চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে আগেই লিখিত ভাবে স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েও উল্টোটা পেলাম। পিডিবি’র উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিষয়টি লিখিত আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

পরীক্ষার কেন্দ্র ও ভুক্তভোগি পরীক্ষার্থী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সমগ্র দেশের সাথে সরাইল কেন্দ্র-১ কালীকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় হাসফাঁস করছিল। ৮ টি কক্ষে ৩৮৮ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরূ হয় সকাল ১০ টায়। পরীক্ষা শুরূর পূর্ব থেকেই বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া আসা শুরূ হয়। ২-৩ মিনিট বিদ্যুৎ থাকে। পরে যায়। আবার ১০-১২ মিনিট পর আবার আসে। প্রথম এক ঘন্টায় প্রায় ৬-৭ বার আসা যাওয়ার খেলায় পরীক্ষার্থীরা গড়ে ৭-৮ মিনিট বিদ্যুৎ পেয়েছে। এ ভাবে চলেছে পুরো ৩ ঘন্টা। ঘেমে সকল শিক্ষার্থীর জামা কাপড় ভিজে একাকার। ঘামছে হাত মুখ ও শরীর। সাথে থাকা রূমাল একটু পরপর ছিপে পানি ফেলছে। যন্ত্রণায় অনেক শিক্ষার্থী ছটফট করছে। দায়িত্বরত প্রত্যবেক্ষকদের কাছে বারবার শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের জন্য আকুতি জানিয়েছে। সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন। পরীক্ষার্থীদের কষ্ট ও ভোগান্তি দেখে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী সাফ জানিয়ে দেন সরাইলের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ চলমান আছে। অথচ তখনও ওই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ছিল না। এর আগে কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সরাইল সরকারি কলেজেরে অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল এক্সেনকে জানালে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন আপনাদের সার্ভিস ক্যাবলে সমস্যা আছে। পরীক্ষার্থী আরিয়ান আহমেদ নাজমুল, মমতা আক্তার, দীন ইসলাম, স্বর্ণা দেবনাথ, গৌরব রায় ও তাহসিনা হিমাসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পরীক্ষাটাকে কোন গুরূত্বই দিলেন না পিডিবি’র এক্সেন। পরীক্ষার আগের রাতে থেমে থেমে ৫-৬ ঘন্টার লোডশেডিং দিলেন। আমরা পড়তেও পারিনি ঘুমাতেও পারিনি। তীব্র গরমে আমরা পরীক্ষা দিতে আসলাম। কেন্দ্রে বিদ্যুৎ-এর নাটক। অধিকাংশ সময় নেই বিদ্যু। কি যে কষ্ট বলে বুঝানো যাবে না। খাতার মধ্যেও শরীরের ঘাম পড়েছে। এক্সেন সাহেব সপ্তাহে ১-২ দিন অফিসে আসেন। কি সমস্যা এইটাই তিনি ৩ ঘন্টার মধ্যে ধরতে পারলেন না। পরের পরীক্ষা গুলোতেও তিনি আমাদেরকে কষ্ট দিবেন। আমরা জানতে পেরেছি লস্কর পাড়া এলাকার ট্রান্সফরমারে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি উনি ও উনার কোন সহকারি জানেনই না। উনি আসলে কি চান? আমাদেরকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ি মো. নজরূল ইসলাম ও সোহেল মিয়া বলেন, সকাল ১০টা থেকেই বিদ্যুৎ নেই। মাঝে মধ্যে আসে ২-৩ মিনিট পর আবার চলে যায়। এভাবেই চলছে।  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৃধা আহমাদুল কামাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উনাকে (এক্সেনকে) পরীক্ষার আগে লিখিত ভাবে জানানোর পরও পরীক্ষার্থীদের বিদ্যুৎবিহীন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ফোন করলে তিনি নানান তালবাহানার কথা বলেন। স্কুলের মিটার সার্ভিসের সমস্যা বলে ভুল বুঝান। আসলে উনার আচরণে মনে হচ্ছে দায়িত্ব জ্ঞানহীন উদাসীন লোক। উনি উদুর পিন্ডি ভুদুর ঘাড়ে চাপাতে চান। শুনেছি পাশের একটি ট্রান্সফরমারের সমস্যা। তিনি সেই দিকে যেতে নারাজ। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন বিদ্যুৎহীনতায় পরীক্ষার্থীদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আগে জানিয়েও এক্সেন সাহেবের কাছ থেকে সঠিক সার্ভিস আজকে পেলাম না। শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাব। সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) মো. শামীম আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরাইলের সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক আছে। ট্রান্সফরমারের সমস্যার বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই স্কুলের (কেন্দ্র) মিটার বা সার্ভিস ক্যাবলে সমস্যা থাকতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে