সাটুরিয়ায় খাল দখলের মহোৎসব

এফএনএস (মোঃ মোতালেব হোসেন; সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ) : | প্রকাশ: ২৯ জুন, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
সাটুরিয়ায় খাল দখলের মহোৎসব

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের বাজার থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে দখল মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ কান্ড ঘটলেও যেন দেখার কেউ নাই। এতে শতবর্ষী এ খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে নির্মাণ করেছেন বাড়ি ও পাকা স্থাপনা। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো কৃষক পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এতে বাধ নির্মাণের ফলে পানি আটকে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। এসব অবৈধ দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না।

এ খালটি সাটুরিয়ার চন্দ্রখাালী নদীর সাটুরিয়া বাজার থেকে শুরু হয়ে উত্তর কাওন্নারা হয়ে পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের আরেক শতবর্ষী খালে গিয়ে মিলিত হয়েছে । এক সময় সড়ক পথে চলাচলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষ ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া ও চলাচল করত। কৃষকের শস্য উৎপাদনে এ খালের ভূমিকা ছিল। সেই খাল দখলদারের কবলে পড়ে হারিয়েছে গতি।

সাটুরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার ধামরাই উপজেলার জোয়ার আমতা গ্রামের মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে বালিয়াটি হয়ে এ সাটুরিয়া সিনেমা হল রোডের খাল হয়ে সাটুরিয়া হাটে আসতাম। আর এখন খাল বাঁধ দিয়ে মেরে ফেলছেন। 

পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, এ খাল দিয়ে বছরের প্রায় সময় একমাত্র যানবাহন ছিল নৌকা। কারন সাটুরিয়া হাট ছিল আশে পাশের সবচেয়ে বড়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফষল নৌ পথে এসে সাটুরিয়া হাটে বিক্রি করত। আবার গ্রামের মানুষ সাপ্তাহিক হাটে বাজার সদাই করে বাড়ি ফিরত।  

কুষ্টিয়া গ্রামের মো. আতাউর রহমান বৃষ্টি বা বর্ষা হলে নিচু জমির পানি এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফষলি জমিতে গিয়ে পড়ত। অনেক সময় কৃষকের আবাদি জমিতে পানির প্রয়োজন হলে খাল থেকে সেচ দিতেন। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সরেজমিন জানা গেছে, সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির দু’পাশে বসবাসকারীরা এক সময় বাশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতো। এর পর তাঁরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করেন। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় ২০-৩০ টি বাঁধ দিয়ে সম্পুর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে খালের পানি র্দুগন্ধ হয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

কাওন্নারা গ্রামের মো. আক্কাছ আলী বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় খালটি দখল হচ্ছে। এর আশপাশ দিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চলাচল করেন। মৌখিকভাবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। ভূমি অফিসের এক শ্রেীণর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিষয়টি জানলেও তাঁরা দখলদারের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিয়োগ রয়েছে। 

খালটি দখল হওয়ায় বিপদে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এটি দিয়ে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, উত্তর কাওন্নারা ও সাটুরিয়ার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে পানি বের করে দিতেন। ফলে সময় মতো তাঁদের শস্য ফলাতে পারতেন। তবে প্রায় ২০ বছর ধরে খাল দিয়ে পানি ঢুকতে না পারায় ফসল উৎপাদন ঠিক মতো করতে পারছেন না। কৃষকদের দাবি, খালটি উদ্ধার করে খনন করতে হবে।


স্থানীয় কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি খাল দখল করে বাড়ি করেছেন। মোকাদছ আলী, শাহ আলম ও তানি আলমরা বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছেন। এতে জমা পানি দূষিত হয়ে রোগ বালাই দেখা দিয়েছে ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।

এ বিষয়ে আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, একসময় এ খালে স্রোত ছিল। এতে তাঁদের জমি ভেঙে খাল প্রসারিত হয়েছে। ওই জায়গা ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তাছাড়া সিনেমা হল রোড থেকে কিভাবে বাড়ি যাব, নিজের টাকা দিয়ে অস্থায়ী বাধ তৈরি করে সড়ক বানিয়েছি।  

সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শহর আলী বলেন, বাঁধ দেওয়ায় সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) একাধিকবার চিঠি ও মৌখিক ভাবে বলেছি। এর পরও কোনো কাজ হয়নি। দখলদাররা দখল করেই চলেছে।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে থাকলে সেটা অপরাধ। এ বিষয়ে আমার দপ্তরে কেহ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে তা উচ্ছেদ করা হবে বলে দাবী করেন প্রশাসনের ঐ কর্মকর্তা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে