ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন চেষ্টায় মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গঠিত এই দলটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের আবেদন করলেও প্রাথমিক বাছাইয়ে তা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শুধু এনসিপি নয়, একই পরিণতির শিকার হয়েছে আরও ১৪৩টি রাজনৈতিক দল। এসব দলের কেউই নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত শর্তসমূহ শতভাগ পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে ইসি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) থেকে ধাপে ধাপে ১৪৪টি দলকে চিঠি দিয়ে ত্রুটি সংশোধনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হচ্ছে। সেই চিঠি অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দলগুলো ঘাটতি তথ্য ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে, তারা নিবন্ধনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আবেদনে উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে বলে ইসির দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়। বিশেষ করে, দলটি ২৫টি উপজেলা ও থানায় ভোটার অন্তর্ভুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে যেমন—নলছিটিতে ১৭৫, পলাশে ১৯৩, কালিয়ায় ১৮৪, জলঢাকায় ১৫৮, কসবায় ১৩৬, সাভারে ১৩০, বাঁশখালীতে ১৩৬, মাদারগঞ্জে মাত্র ১০৮ জন ভোটারের স্বাক্ষর।
শুধু ভোটার সংখ্যা নয়, ইসির চিঠিতে এনসিপির আবেদনে যে ঘাটতিগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—সকল জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ তালিকা না থাকা, বেশ কিছু অফিস ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম না থাকা, ইটনা ও হালুয়াঘাটের অফিস ভাড়ার কাগজে ঠিকানা ও দলের নাম না থাকা। আরও অভিযোগ রয়েছে যে, কিছু উপজেলায় ভোটার তালিকায় অন্য উপজেলার ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং কিছু ভোটারকে একাধিকবার দেখানো হয়েছে। ডিমলা উপজেলায় ২০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনপত্র সংক্রান্ত ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে দলীয় তহবিলের পরিমাণ ও উৎস যথাযথভাবে উল্লেখ না করা, আবেদন ফরম-১-এর ফিল্ড নম্বর-৯ ফাঁকা রাখা, দলীয় গঠনতন্ত্রে সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান না থাকা এবং দলপ্রধানের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত না থাকা। এসব ঘাটতির কারণে দলটির আবেদনটি তাৎক্ষণিকভাবে বিবেচনায় আনা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ইসি।
নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলকে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর থাকতে হবে, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর অফিস থাকতে হবে এবং কমপক্ষে ১০০ উপজেলা বা মহানগর থানায় ২০০ জন ভোটার সদস্যসহ কার্যকর কমিটি থাকতে হবে। এসব শর্ত পূরণে এনসিপি সফল হয়নি বলেই স্পষ্ট করা হয়েছে চিঠিতে।
উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ধারাবাহিকতায় গঠিত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মো. নাহিদ ইসলাম। ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানের পর রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া নাহিদ ইসলাম এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
গত ২২ জুন ছিল নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তির পর ১৪৪টি রাজনৈতিক দল ১৪৭টি আবেদন জমা দেয়। এসব আবেদনের যাচাই-বাছাই শেষে দেখা গেছে, কোনো দলই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্যপত্র পূর্ণাঙ্গভাবে জমা দিতে পারেনি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, যেসব দল নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যে ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না, তারা নিবন্ধনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার এই ধাপে পড়ে এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়লেও সংশোধিত আবেদনপত্র যথাসময়ে জমা দিয়ে তারা সুযোগ ধরে রাখতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।