জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি পদযাত্রা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় প্রাণ হারানো তিনজনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে দায়ের হওয়া পৃথক হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আবেদনের পর বিচারিক আদালত এই নির্দেশ দেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান জানিয়েছেন, আদালত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। মরদেহগুলো কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ময়নাতদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থানে রমজান কাজীর মরদেহ উত্তোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এর আগে শনিবার (১৯ জুলাই) গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে চারটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৫০০ জনকে এবং একটি মামলায় ৯০০ জনকে আসামি করা হয়। প্রতিটি মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে মাদারীপুরগামী গাড়িবহর গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করলে শহরের এসকে সালেহিয়া মাদরাসার কাছে তা থমকে দাঁড়ায়।
ওই সময় এনসিপির নেতৃবৃন্দের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং কিছু দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে মামলার বাদীরা অভিযোগ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায়।
এই সহিংসতায় নিহত হন রমজান কাজী (১৭), দীপ্ত সাহা (২৭), সোহেল রানা মোল্লা (৩০) ও ইমন তালুকদার। প্রত্যেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যেকটি ঘটনায় নির্দিষ্ট উপপরিদর্শক বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। যেমন, রমজান কাজীর ঘটনায় এসআই মো. আইয়ুব হোসেন, দীপ্ত সাহার ঘটনায় এসআই মো. শামীম হোসেন, সোহেল রানা মোল্লার ঘটনায় এসআই আবুল কালাম আজাদ এবং ইমন তালুকদারের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান।
মামলাগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনায় উল্লেখ করা হয়— শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে এনসিপির নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন সোহেল রানা, যিনি মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে, শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে সংঘর্ষে আহত হন ইমন তালুকদার। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনে সংঘর্ষে নিহত হন দীপ্ত সাহা।
মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশের মাধ্যমে এই ঘটনার তদন্তে নতুন গতি আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টগুলো ভবিষ্যতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।