দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনেকের খালি হাতে ফেরা

সাশ্রয়ী পণ্যের আশায় টিসিবির লাইনে ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ০১:১৫ পিএম | প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
সাশ্রয়ী পণ্যের আশায় টিসিবির লাইনে ভিড়

দীর্ঘ দুই মাস বিরতির পর ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম আবারও শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত রোববার (১০ আগস্ট) থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চালু হওয়া এ কার্যক্রমে প্রথম দিন থেকেই দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় এবার লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।

টিসিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বল্প আয়ের মানুষকে সহায়তা করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জন ভোক্তার কাছে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে—তেল লিটারপ্রতি ১১৫ টাকা, ডাল কেজিপ্রতি ৭০ টাকা এবং চিনি কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় প্রতিদিন শত শত মানুষ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রাজধানীর কোনাপাড়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরে আসা মো. শুক্কুর মিয়া বলেন, “ট্রাকের কাছাকাছি গিয়ে শুনি পণ্য শেষ। দুই দিন ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু পাইনি।” খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের এক ডিলার প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম জানান, “প্রতিদিন ৫০০ জনের জন্য মাল আনা হয়। অথচ লাইনে দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ জন। এ কারণে নিয়মিতই ২০০ জন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।”

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির জানান, এ কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করেই এবার ডালের দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার দাম সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে টিসিবির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে বেশি মানুষ উপকৃত হন।

সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন (শুক্রবার ছাড়া) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫টি করে ট্রাক, গাজীপুরে ৬টি, কুমিল্লায় ৩টি এবং আরও কয়েকটি জেলায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রাকের মাধ্যমে এ বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। ঢাকা মহানগরীতে একা ৬০টি স্থানে প্রতিদিন এই পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে ডিলার ও ক্রেতাদের অভিযোগ, কোথায় কখন ট্রাক আসবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা এবং সরবরাহ ঘাটতির কারণে প্রতিদিন ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক স্থানে ক্রেতাদের ক্ষোভে ট্রাকের কর্মীরা শারীরিকভাবে হেনস্তারও শিকার হয়েছেন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দ্রব্যমূল্যের চাপ মোকাবিলায় টিসিবির পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো জরুরি। তবে শুধু এ উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে না আনলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, “টিসিবির কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে। আমরা এটিকে আরও বিস্তৃত করব। আশা করছি, এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে