অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দু’টি পৃথক মামলায় গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ দু’জনকে ৮ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন খুলনার একটি আদালত। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন অর্থ দন্ড অনাদায়ে ওই দু’জনকে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় জজ আদালতের বিচারক মো: আশরাফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: ইয়াছিন আলী।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর আটুলিয়া শাখার গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ জাহিদুর রহমান। অপরজন হলেন একই জেলার নলতা মোবারকনগর সাব-পোষ্ট অফিসের সাব পোষ্ট মাষ্টার মো: নাজমুল ইসলাম। এ দু’আসামির মধ্যে মো: নাজমুল ইসলাম উপস্থিত থাকলেও অপর আসামি পলাতক ছিলেন।
আদালতের সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া শাখায় গ্রামীন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন সৈয়দ জাহিদুর রহমান। এ সময় তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহিরাগত আমানতকারীদের নিকট টাকা গ্রহণ করে। ওই টাকা ব্যাংকে হিসাবভুক্ত না করে বা চেকে জাল স্বাক্ষর দিয়ে উত্তোলন করে। এবং ভূমিহীন মহিলা কেন্দ্রের বিভিন্ন ঋণ গ্রহীতার নামে ভুয়া ঋণ বিতরণ দেখিয়ে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৫২৪ টাকা আত্মসাত করে।
২০১২ সালের ৫ এপ্রিল এ ঘটনায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরবর্তী শাখা ব্যবস্থাপক মোহা: আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় এ অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ১০। ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবুল হাসেম কাজী তদন্ত শেষে সৈয়দ জাহিদুর রহমানকে আসামি করে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং ২০২২ সালের ২৪ মে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারায় তাকে ৮ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন। পাশাপাশি তাকে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৫২৪ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়াও তাকে আরও ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।
অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলার নলতা মোবরকনগর সাব-পোষ্ট অফিসে মো: নজরুল ইসলাম সাব পোষ্ট মাষ্টার থাকাকালীন সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২৫ লাখ ৩৮ হাজার উনপঞ্চাশ টাকা আট পয়সা সরকারি খাতে জমা না দিয়ে অত্মসাত করেন। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থানার পোষ্ট অফিস পরিদর্শক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং ৫।
২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর এ ঘটনায় খুলনা দুদক দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মে: নাজমুল হুসাইন তদন্ত শেষে মো: নজরুল ইসলামকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়
এ অভিযোগে আদালত তাকে ৮ বছরের সশ্রম কারদন্ড প্রদান করেন। পাশাপাশি তাকে ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯ টাকা ৮ পয়সা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারদ- দেন।
ওই আদালতের পিপি সেলিম আল আজাদ বলেন, তারা দু’জনই বিভিন্ন গ্রাহক ও আমানতকারীদের নিকট হতে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করেছে। মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন সঠিকভাবে তদন্ত করে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। আদালত বিচার বিশ্লেষণ করে সাজা দিয়েছেন।