ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মালিক এর বিরুদ্ধে

কুমিল্লায় অর্ধ শতাধিক হজযাত্রীদের অর্থ আত্মসাতসহ অনিয়মের অভিযোগ

এফএনএস (মোঃ হাবিবুর রহমান খান; কুমিল্লা) : | প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
কুমিল্লায় অর্ধ শতাধিক হজযাত্রীদের অর্থ আত্মসাতসহ অনিয়মের অভিযোগ

ইসলামের প্রধান পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হজ। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মক্কায় হজের উদ্দেশে একত্রিত হয়। এই হজ কার্যক্রমকে ঘিরে এবার প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে  ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মালিক ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাও: কাজী মো: অলি উল্লাহ ভূইয়া এর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধ শতাধিক হজ্বযাত্রীদেরকে হজ্বে নেয়ার কথা বলে তাদের অর্থ আত্মসাত করেছেন।

বিভিন্ন অভিযোগ থেকে জানা যায়- গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ বিমানে ওমরাহ হজ্ব পাঠানোর কথা বলে ইন্ডিগো এয়ারে যাওয়া এবং কাতার এয়ারের আসার কথা বলে ১২ জন ওমরাহ হজ্ব যাত্রীদের প্রতারণা করে ব্যাংকের মাধ্যমে ১০' লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও ২০২৪ সালে ২৭ মার্চ ৩২ জন হজ্বগামী যাত্রীকে ওমরা হজ্বে নেয়ার জন্য ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে ইপিজেড ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী মাও: ইব্রাহিম সিরাজ।

ভূক্তভোগী মাও: ইব্রাহিম সিরাজী অভিযোগ করেন-মধ্যম আশ্রাফপুর শাপলা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অফিসে করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে হজ্বে নিয়ত করা ব্যক্তি সাথের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত করে আসছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন নারী-পুরুষদের ভুয়া বিবাহ করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূক্তভোগী ইব্রাহিম সিরাজীর অভিযোগ থেকে জানা যায়- সুমাইয়া মাদ্রাসার মুহতামিমকে  মাও: ইব্রাহিম সিরাজির সাথে ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল মালিক ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক মাও: কাজী মো: অলি উল্লাহ ভূইয়ার সাথে সম্পর্ক গঠে উঠে। এক সময় অলি উল্লাহ সিরাজীকে বিশ্বাস করে  ২০২৪ সালে ২৭ মার্চ ৩২ জন হজ্বগামী যাত্রীকে ওমরা হজ্বে নেয়ার জন্য ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

পরে অলি উল্লাহ ভূইয়া ৩২ জনকে ১লা এপ্রিল ৩২টি ভূয়া বিমানের টিকেট দিয়ে শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পাঠায়। বিমান বন্দর ইমিগ্রেশনে বিমানের টিকেট চেক করতে দিলে এগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে অলি উল্লাহ ভূইয়ার সাথে যোগাযাগ করা হলে তিনি তালবাহানা শুরু করেন। এর পর তিন দিন পর আরও ৭ লাখ টাকা নিয়ে ৩২ জনকে ৩২টি বিমান টিকেট দেন। পরে ৩২জন হজ্বযাত্রী ৩ জন হোটেল থেকে নিজ খরচে খাওয়া ধাওয়া করে বহু কষ্টে অতিবাহিত করেন। ওমরা করতে গিয়ে সেখানে অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পরে। পরে পরে ওমরা হজ্ব শেষে কুমিল্লা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড. মোস্তাফিজুর রহমান লিটনকে বিষয়টি জানালে তিনি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বসে  ২০২৪ সালের জুন মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সিটি ব্যাংকের চেক দেন। চেক পাওয়ার পর ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারে তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এখানেও সে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। পরে অলি উল্লাহকে বিষয়টি জানালে তিনি পুনরায় তালবাহান শুরু করেন। পরে আরও কুমিল্লা বারে সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন গেলে তিনি আবারও শালিক বৈঠক বসলে তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে এবং টাকা ফেরত দিবেন বলে ওই সালিশী থেকে চলে আসেন। পরে ইব্রাহিম হুজুর অলি উল্লাহর নিকট টাকার জন্য গেলে তিনি তালবাহান করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাও: ইব্রাহিম সিরাজী ইপিজেড ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ বিমানে ওমরাহ হজ্ব পাঠানোর কথা বলে ইন্ডিগো এয়ারে যাওয়া এবং কাতার এয়ারের আসার কথা বলে ১২' জন ওমরাহ হজ্ব যাত্রীদের ধোঁকা দিয়ে ব্যাংকে জঞএঝ এর মাধ্যমে ১০' লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত ১২' জন ওমরাহ হজ্ব যাত্রীদের রয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের হাজি শহীদুল ইসলামের ছেলে আলহাজ্ব মুহাম্মদ ময়নাল হোসেন (৫৪), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আবদুস সামাদ (৭৪), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আবদুল মোনাফ (৭০), বুড়িচং উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুল মোনাফের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬৫), কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের তালেব হোসেনের ছেলে মোঃ ময়নল হোসেন (৫১), শিদলাই গ্রামের আবুল হাসেম মাষ্টারের ছেলে মোঃ মহি উদ্দিন (৪৩), ব্ুিড়চং উপজেলার শোভারামপুর গ্রামে গোলাম আহাম্মদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), শিদলাই গ্রামের মোঃ মহি উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৩৩), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরের আবদুল মালেকের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম (৬০), কুমিল্লা সদর উপজেলার কালিয়াজুরী গ্রামের আসমত আলীর পুত্র মুক্তিযুদ্ধা আবদুর রশীদ (৭৫), কুমিল্লা সদর উপজেলার আড়াইওড়া গ্রামের ছায়েদ আলীর পুত্র আলী আশ্রাফ (৭০)।

এ বিষয়টি সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ কাতার এয়ার লাইন্স অফিসে টিকেট যাচাই করে জানা যায়, প্রতারক ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে সরবরাহকৃত ১২'জন ওমরাহ হজ্ব যাত্রী ফিরতি ফ্লাইট সিডিউল অনুযায়ী ৭' মার্চ ২০২৪ই ইস্যুকৃত ১২'টি টিকেটই ছিলো ভুয়া। পরিশেষে কাতার এয়ার লাইন্স কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত ওমরাহ হজ্ব যাত্রীগন নতুন করে গত ১'মার্চ জাজিরা এয়ার লাইন্সের টিকেট কাটতে বাধ্য হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরাহ হজ্ব যাত্রীগন প্রায় ২' লাখ ৭৭' হাজার লোকসান গুনতে বাধ্য হন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ট্রাভেলস এজেন্সি "ওয়ালিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল" এর স্বত্বাধিকারী কাজি মাওলানা ওয়াজি উল্লাহ বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরাহ হজ্ব যাত্রীদের পক্ষে দেশে ফিরে মামলার করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক হুজুর অভিযোগ করে বলেন- অলি উল্লাহ হুজুর আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটি মানুষদের সাথে বহু প্রতারণা করেছেন। বর্তমানে ৫ আগষ্টের পরও তিনি তার প্রতারণা বন্ধ করেননি। এখনো তিনি মানুষকে হজ্বে নেয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাত করে আসছেন।

এ বিষয়ে ইপিজেড ফাঁড়ি ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন- আমি একটি অভিযোগ পেয়েছে। তাদের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি।


আপনার জেলার সংবাদ পড়তে