ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিনভর উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের পর থেকে সহিংস পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হলেও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ভবন ও অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সকাল পৌনে একটা থেকে সোয়া একটার মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা চালানো হয়। অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরোনো ভবনের নিচতলার সব কার্যালয় এবং নতুন তিনতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে হামলা চালানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া হাইওয়ে থানার সামনে চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অফিসার্স ক্লাবের এসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরা লুট হয়েছে।
স্থানীয় প্রহরী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শত শত বিক্ষোভকারী ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে উপজেলা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। খোলা অফিসগুলোতে হামলা চালানো হয়, তবে বন্ধ কক্ষগুলোতে হামলার চেষ্টা করা হয়নি। উপস্থিত সাংবাদিকরাও হামলার সময় আক্রান্ত হন; তাঁদের মোবাইল ছিনতাই করা হয় এবং মারধর করা হয়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘জনগণ ঘরে ফিরে গেছে। মহাসড়ক বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’ তবে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা এলাকায় ঢাকা-খুলনা ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া হামিরদী ও নওপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধকারীরা অবস্থান করছেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকায় ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়। এর পর থেকে স্থানীয় জনতা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
ভাঙ্গা গোলচত্বর এবং আশপাশে সকাল-দুপুরে হাজারো বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও সীমিত পুলিশ উপস্থিতি সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা ভাঙ্গা মডেল মসজিদে আশ্রয় নেন।
এই সহিংসতার প্রেক্ষাপটে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিকেলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও মহাসড়ক ও অলিগলিতে এখনও আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।